পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ \లిన ) “না কুমু, সেজন্যে তোমাকে ভাবতে হবে না।” "ওরা কিন্তু তোমাকে বিপদে ফেলবার চেষ্টা করবে।” "ওরা যা করতে পারে তা করা শেষ হলেই আমার উপর ওদের ক্ষমতাও শেষ হবে। তখনই আমি হব স্বাধীন। তাকে তুই বিপদ বলছিস কেন ?” "দাদা, সেইদিন তুমি আমাকেও স্বাধীন করে নিয়ে। ততদিন ওদের ছেলেকে আমি ওদের হাতে দিয়ে যাব। এমন কিছু অাছে যা ছেলের জন্যেও খোওয়ানো যায় না।” “আচ্ছা, আগে হোক ছেলে, তার পরে বলিস।” “তুমি বিশ্বাস করছ না, কিন্তু মার কথা মনে আছে তো? তার তো হয়েছিল ইচ্ছামৃত্যু। সেদিন সংসারে তিনি তার জায়গাটি পাচ্ছিলেন না, তাই তার ছেলেমেয়েদেরকে অনায়াসে ফেলে দিয়ে যেতে পেরেছিলেন। মানুষ যখন মুক্তি চায়, তখন কিছুতেই তাকে ঠেকাতে পারে না। আমি তোমারই বোন, দাদা, আমি মুক্তি চাই। একদিন যেদিন বাধন কাটব, মা সেদিন আমাকে আশীৰ্বাদ করবেন এই আমি তোমাকে বলে রাখলুম।” আবার অনেকক্ষণ দুজনে চুপ করে রইল। হঠাৎ হু হু করে বাতাস উঠল, টিপায়ের উপর বিপ্রদাসের পড়বার বইটার পাতাগুলো ফর ফর করে উলটে যেতে লাগল। বাগান থেকে বেলফুলের গন্ধে ঘর গেল ভরে। কুমু বললে, “আমাকে ওরা ইচ্ছে করে দুঃখ দিয়েছে তা মনে কোরো না। আমাকে সুখ ওরা দিতে পারে না আমি এমনি করেই তৈরি। আমিও তে ওদের পারব না স্থখী করতে। যারা সহজে ওদের সুখী করতে পারে তাদের জায়গা জুড়ে কেবল একটা-না-একটা মুশকিল বাধবে । তা হলে কেন এ বিড়ম্বন ? সমাজের কাছ থেকে অপরাধের সমস্ত লাঞ্ছনা আমিই একলা মেনে নেব, ওদের গায়ে কোনো কলঙ্ক লাগবে না। কিন্তু একদিন ওদেরকে মুক্তি দেব, আমিও মুক্তি নেব ; চলে আসবই এ তুমি দেখে নিয়ে। মিথ্যে হয়ে মিথ্যের মধ্যে থাকতে পারব না। আমি ওদের বড়োবউ, তার কি কোনো মানে আছে যদি আমি কুমু না হই? দাদা, তুমি ঠাকুর বিশ্বাস কর না, আমি বিশ্বাস করি। তিন মাস আগে যেরকম করে করতুম, আজ তার চেয়ে বেশি করেই করি। আজ সমস্ত দিন ধরেই এই কথা ভাবছি যে, চারি দিকে এত এলোমেলো, এত উলটো-পালটা, তৰু এই জঞ্জালে একেবারে ঢেকে ফেলে নি জগৎটাকে । এ সমস্তকে ছাড়িয়ে গিয়েও চন্দ্রসুর্যকে নিয়ে সংসারের কাজ চলছে, সেই যেখানে ছাড়িয়ে গেছে সেইখানে