পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8〉br রবীন্দ্র-রচনাবলী শুনি না কি মিত্রবরে দুখের যে অংশী করে হাপ ছেড়ে প্রাণ তার বঁাচে ।” এই বর্ণনাগুলি কতবার পাঠ করিয়াছি তাহার সংখ্যা নাই, এবং এই-সকল শ্লোকের মধ্য দিয়া সমুদ্র-পৰ্বত-অরণ্যের আহবান বালক পাঠকের অন্তরে ধ্বনিত হইয়৷ উঠিয়াছিল। সাময়িক অন্য কবির রচনাতেও প্রকৃতিবর্ণনা আছে কিন্তু তাহ প্রথাসংগত বর্ণনামাত্র, তাহ কেবল কবির কর্তব্যপালন । তাহার মধ্যে সেই সোনার কাঠি নাই যাহার স্পর্শে নিখিল প্রকৃতির অন্তরাত্মা সজীব ও সজাগ হইয়া আমাদিগকে নিবিড় প্রেমপাশে আবদ্ধ করে। সাময়িক কবিদিগের সহিত বিহারীলালের আর-একটি প্রধান প্রভেদ র্তাহার ভাষা। ভাষার প্রতি আমাদের অনেক কবির কিয়ৎপরিমাণে অবহেলা আছে । বিশেষত মিত্রাক্ষর ছন্দের মিলটা তাহারা নিতান্ত কায়ক্লেশে রক্ষা করেন। অনেকে কেবলমাত্র শেষ অক্ষরের মিলকে যথেষ্ট জ্ঞান করেন এবং অনেকে ‘হয়েছে’ ‘করেছে’ ‘ভুলেছে প্রভৃতি ক্রিয়াপদের মিলকে মিল বলিয়া গণ্য করিয়া থাকেন। মিলের দুইটি প্রধান গুণ আছে, এক তাহ কর্ণতৃপ্তিকর আর এক অভাবিতপূর্ব। অসম্পূর্ণ মিলে কর্ণের তৃপ্তি হয় না, সেটুকু মিলে স্বরের অনৈক্যটা আরও যেন বেশি করিয়া ধরা পড়ে এবং তাহাতে কবির ক্ষমতা ও ভাষার দারিদ্র্য প্রকাশ পায় । ক্রিয়াপদের মিল যত ইচ্ছা করা যাইতে পারে— সেরূপ মিলে কর্ণে প্রত্যেকবার নূতন বিস্ময় উৎপাদন করে না, এইজন্য তাহ বিরক্তিজনক ও "একঘেয়ে’ হইয় ওঠে । বিহারীলালের ছন্দে মিলের এবং ভাষার দৈন্ত নাই। তাহ প্রবহমান নিৰ্ব্বরের মতো সহজ সংগীতে অবিশ্রাম ধ্বনিত হইয়া চলিয়াছে। ভাষা স্থানে স্থানে সাধুত পরিত্যাগ করিয়া অকস্মাৎ অশিষ্ট এবং কর্ণপীড়ক হইয়াছে, ছন্দ অকারণে আপন বাধ ভাঙিয়া স্বেচ্ছাচারী হইয়া উঠিয়াছে, কিন্তু সে কবির স্বেচ্ছাকৃত ; অক্ষমতাজনিত নহে। র্তাহার রচনা পড়িতে পড়িতে কোথাও এ কথা মনে হয় না যে, এইখানে কবিকে দায়ে পড়িয়া মিল নষ্ট বা ছন্দ ভঙ্গ করিতে হইয়াছে । কিন্তু উপরে যে ছন্দের শ্লোকগুলি উদ্ভূত হইয়াছে ‘বঙ্গসুন্দরী’তে সেই ছন্দই প্রধান নহে। প্রথম উপহারটি ব্যতীত ‘বঙ্গসুন্দরী’র অন্য সকল কবিতার ছন্দই পর্যায়ক্রমে বারে এবং এগারো অক্ষরে ভাগ করা । যথা—