পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধুনিক সাহিত্য i 8Oම් হইয়৷ সাধারণের বিদায়সম্ভাষণ প্রাপ্ত হইলেন না ; কিন্তু এ কথা সাহসপূর্বক বলিতে পারি, সাধারণের পরিচিত কণ্ঠস্থ শতসহস্র রচনা যখন বিনষ্ট এবং বিস্মৃত হইয়া যাইবে ‘সারদামঙ্গল’ তখন লোকস্মৃতিতে প্রত্যহ উজ্জলতর হইয়া উঠিবে এবং কবি বিহারীলাল যশ:ম্বর্গে,অম্লান বরমাল্য ধারণ করিয়া বঙ্গসাহিত্যের অমরগণের সহিত একাসনে বাস করিতে থাকিবেন । আষাঢ় ১৩০১ সঞ্জীবচন্দ্র পালামেী কোনো কোনো ক্ষমতাশালী লেখকের প্রতিভায় কী একটি গ্রহদোষে অসম্পূর্ণতার অভিশাপ থাকিয়া যায় ; তাহারা অনেক লিখিলেও মনে হয় তাহীদের সব লেখা শেষ হয় নাই। র্তাহীদের প্রতিভাকে আমরা মুসংলগ্ন আকারবদ্ধভাবে পাই না ; বুঝিতে * পারি তাহার মধ্যে বৃহত্ত্বের মহত্ত্বের অনেক উপাদান ছিল, কেবল সেই সংযোজনা ছিল না যাহার প্রভাবে সে আপনাকে সর্বসাধারণের নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়ে প্রকাশ ও প্রমাণ করিতে পারে। সঞ্জীবচন্দ্রের প্রতিভা পূর্বোক্ত শ্রেণীর। তাহার রচনা হইতে অনুভব করা যায় র্তাহার প্রতিভার অভাব ছিল না, কিন্তু সেই প্রতিভাকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করিয়া যাইতে পারেন নাই। র্তাহার হাতের কাজ দেখিলে মনে হয়, তিনি যতট। কাজে দেখাইয়াছেন তাহার সাধ্য তদপেক্ষ অনেক অধিক ছিল । র্তাহার মধ্যে যে পরিমাণে ক্ষমতা ছিল সে পরিমাণে উদ্যম ছিল না। র্তাহার প্রতিভার ঐশ্বর্য ছিল কিন্তু গৃহিণীপনা ছিল না। ভালো গৃহিণীপনায় স্বল্পকেও যথেষ্ট করিয়া তুলিতে পারে ; যতটুকু আছে তাহার যথাযোগ্য বিধান করিতে পারিলে তাহার দ্বারা প্রচুর ফল পাওয়া গিয়া থাকে। কিন্তু অনেক থাকিলেও উপযুক্ত গৃহিণীপনার অভাবে সে ঐশ্বর্য ব্যর্থ হইয়া যায় ; সে-স্থলে অনেক জিনিস ফেলাছড়া যায় অথচ অল্প জিনিসই কাজে আসে। র্তাহার অপেক্ষ অল্প ক্ষমতা লইয়া অনেকে যে পরিমাণে সাহিত্যের অভাব মোচন করিয়াছেন তিনি প্রচুর ক্ষমতা সত্ত্বেও তাহা পারেন নাই ; তাহার কারণ সঞ্জীবের প্রতিভা ধনী, কিন্তু গৃহিণী নহে। একটা উদাহরণ দিলেই পাঠকগণ আমার কথাটা বুঝিতে পারিবেন। জাল প্রতাপচাদ -নামক গ্রন্থে সঞ্জীবচন্দ্র যে ঘটনাসংস্থান, প্রমাণবিচার এবং লিপিনৈপুণ্যের পরিচয় দিয়াছেন, বিচিত্র জটিলতা ভেদ করিয়া যে-একটি কৌতুহলজনক আনুপূর্বিক