পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8○○ রবীন্দ্র-রচনাবলী শিশু-ভিক্ষুকের চিত্রটি সমস্ত শিশুজাতির প্রতি আমাদের মনের একটি মধুর রস অাকর্ষণ করিয়া আনে । দৃশুটি নূতন এবং অসামান্ত বলিয়া নহে, পরন্তু পুরাতন এবং সামান্য বলিয়াই আমাদের হৃদয়কে এরূপ বিচলিত করে। শিশুদের মধ্যে আমরা মাঝে মাকে ইহারই আমুরূপ অনেক ঘটনা দেখিয়া আসিয়াছি, সেইগুলি বিস্মৃতভাবে আমাদের মনের মধ্যে সঞ্চিত ছিল। সঞ্জীবের রচিত চিত্রটি আমাদের সম্মুখে খাড়া হইবামাত্র সেই-সকল অপরিস্ফুট স্মৃতি পরিস্ফুট হইয়া উঠিল এবং তৎসহকারে শিশুদের প্রতি আমাদের স্নেহরাশি ঘনীভূত হইয়৷ আনন্দরসে পরিণত হইল । கடி চন্দ্রনাথবাবু বলেন, সচরাচর লোকে যাহা দেখে না সঞ্জীববাবু তাহাই দেখিতেন— ইহা তাহার একটি বিশেষত্ব। আমরা বলি, সঞ্জাববাবুর সেই বিশেষত্ব থাকিতে পারে, কিন্তু সাহিত্যে সে বিশেষত্বের কোনো আবশ্বকতা নাই। আমরা পূর্বে যে ঘটনাটি উদ্ধৃত করিয়াছি তাহ নূতন লক্ষগোচর বিষয় নহে, তাহার মধ্যে কোনে নূতন চিন্ত৷ বা পর্যবেক্ষণ করিবার কোনে নূতন প্রণালী নাই, কিন্তু তথাপি উহ। প্রকৃত সাহিত্যের অঙ্গ। গ্রন্থ হইতে আর-এক অংশ উদ্ধৃত করিয়া দিতেছি। লেখক বলিতেছেন, একদিন পাহাড়ের মূলদেশে দাড়াইয়া চীৎকার-শব্দে একটা পোষ৷ কুকুরকে ডাকিবামাত্র পশ্চাতে সেই চীৎকার আশ্চর্যরূপে প্রতিধ্বনিত হইল। পশ্চাৎ ফিরিয়া পাহাড়ের প্রতি চাহিয়। আবার চীৎকার করিলাম, প্রতিধ্বনি আবার পূর্বমত হ্রস্বদীর্ঘ হইতে হইতে পাহাড়ের অপর প্রান্তে চলিয়া গেল। আবার চীৎকার করিলাম, শব্দ পূর্ববং পাহাড়ের গায়ে লাগিয়া উচ্চনীচ হইতে লাগিল। এইবার বুঝিলাম, শব্দ কোনো-একটি বিশেষ স্তর অবলম্বন করিয়া যায় ; সেই স্তর যেখানে উঠিয়াছে বা নামিয়াছে শব্দও সেইখানে উঠিতে নামিতে থাকে।. ঠিক যেন সেই স্তরটি শব্দ-কন্‌ডক্‌টার । ইহা বিজ্ঞান, সম্ভবত ভ্রান্ত বিজ্ঞান। ইহা নূতন হইতে পারে, কিন্তু ইহাতে কোনো রসের অবতারণা করে না— আমাদের হৃদয়ের মধ্যে যে-একটি সাহিত্য-কনডক্টর আছে সে স্তরে ইহ প্রতিধ্বনিত হয় না। ইহার পূর্বোদধূত ঘটনাটি অবিসংবাদিত ও পুরাতন, কিন্তু তাহার বর্ণনা আমাদের হৃদয়ের সাহিত্যস্তরে কম্পিত হইতে থাকে। চন্দ্রনাথবাবু তাহার মতের সপক্ষে একটি উদাহরণ প্রয়োগ করিয়াছেন। সেটি আমরা মূল গ্রন্থ হইতে আদ্যোপাস্ত উদ্ধৃত করিতে ইচ্ছা করি। to নিত্য অপরাহ্লে আমি লাতেহার পাহাড়ের ক্রোড়ে গিয়া বসিতাম, তাবুতে শত কার্য থাকিলেও আমি তাহ ফেলিয়া যাইতাম । চারিট বাজিলে আমি অস্থির হইতাম ; কেন তাহা কখনও ভাবিতাম না ; পাহাড়ে কিছুই নূতন নাই ; কাহারও