পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধুনিক সাহিত্য 8 ( ఫి পরুষবচনে তিরস্কৃত হইয়াছিলেন এমন দেখা যায় না। তথাপি তিনি এ তিরস্কারে ভ্ৰক্ষেপও করিলেন না। যুরোপীয়দের মতে ডাকিয়। বলিলেন না, “শিশুপাল, ক্ষম। বড়ো ধর্ম, আমি তোমায় ক্ষমা করিলাম।” নীরবে শত্রুকে ক্ষমা করিলেন।’ শ্ৰীকৃষ্ণের ক্ষমাগুণের বর্ণনাস্থলে অকারণে যুরোপীয়দের প্রতি একটা অন্যায় খোচ দেওয়া যে কেবল অনাবশ্বক হইয়াছে তাহা নহে ; ইহাতে মূল উদেগুটি পর্যন্ত নষ্ট হইয়াছে। পাঠকদের চিত্তকে যেরূপভাবে প্রস্তুত করিয়া তুলিলে তাহারা কৃষ্ণের ক্ষমাশক্তির মাহাত্ম্য হৃদয়ে গ্রহণ করিতে পারিত তাহ ভাঙিয়। দেওয়া হইয়াছে। 'কৃষ্ণচরিত্রের ন্যায় গ্রন্থ কেবল আধুনিক হিন্দুদের জন্য লিখিত হওয়া উচিত নহে, তাহ সর্বকালের সর্বজাতির জন্যই রচিত হওয়া কর্তব্য। পাঠকের অনায়াসেই বুঝিতে পরিবেন এই অংশ পাঠকালে একজন যুরোপীয় পাঠকের মনে কিরূপ বিদ্রোহী ভাবের উদয় হওয়া সম্ভব । বিশেষত, ক্ষমা করিবার সময় ক্ষমাধর্মের মহিমাকীর্তন যে যুরোপীয়দের জাতীয় প্রকৃতি এরূপ সাধারণ কথা লেখক কোথা হইতে সংগ্ৰহ করিলেন বলা কঠিন। আমাদের শাস্ত্রে এরূপ উদাহরণ ভূরি ভূরি আছে– যখন বিশ্বামিত্র বশিষ্ঠের গাভী বলপূর্বক হরণ করিয়া লইয়া যাইতেছিলেন এবং নন্দিনী অতিশয় তাড়িত হইয়া আর্তরবে বশিষ্ঠের সম্মুখে উপস্থিত হইলেন তখন বশিষ্ঠ কহিলেন, হে ভদ্রে নন্দিনী, তুমি পুনঃপুনঃ রব করিতেছ, তাহা অামি শুনিতেছি ; কিন্তু হে ভদ্রে, যখন রাজা বিশ্বামিত্র তোমাকে বলপূর্বক হরণ করিতেছেন তখন আমি কী করিব ! যেহেতু আমি ক্ষমাশীল ব্রাহ্মণ । পুনশ্চ নন্দিনী তাহার নিকট কাতরতা প্রকাশ করিলে তিনি কহিলেন, ‘ক্ষত্রিয়ের বল তেজ এবং ব্রাহ্মণের বল ক্ষমা ; অতএব আমি ক্ষমাগুণে আকৃষ্ট হইতেছি।” ‘ইন্দ্রিয়সুখাভিলাষী ব্যক্তিগণ মধ্যাবস্থাতেই সন্তুষ্ট থাকে ; কিন্তু উহা দুঃখের আকর ; রাজ্যলাভ বা বনবাস সুখের নিদান ।” শ্ৰীকৃষ্ণের এই মহদুক্তি উদধূত করিয়া বঙ্কিম বলিতেছেন— ‘হিন্দু পুরাণেতিহাসে এমন কথা থাকিতে আমরা কিনা, মেমসাহেবদের লেখা নবেল পড়িয়া দিন কাটাই, না-হয় সভা করিয়া পাচ জনে জুটিয়া পাখির মতে কিচিরমিচির করি ।” ক্ষণে ক্ষণে লেখকের এরূপ ধৈর্যচ্যুতি কৃষ্ণচরিত্রের ন্যায় গ্রন্থে অতিশয় অযোগ্য হইয়াছে। গ্রন্থের ভাষায় ভাবে ও ভঙ্গীতে সর্বত্রই একটি গাম্ভীর্য, সৌন্দর্য ও ঔদার্য রক্ষা না করাতে বর্ণনীয় আদর্শচরিত্রের উজ্জলতা নষ্ট হইয়াছে। বঙ্কিম সামান্য উপলক্ষমাত্রেই যুরোপীয়দের সহিত, পাঠকদের সহিত এবং > |\oo