পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধুনিক সাহিত্য 8ՆԳ প্রথম-প্রথম খটকা লাগিতেছিল। আমি ভাবিতেছিলাম, বড়োই বেশি তাড়াতাড়ি দেখিতেছি— কাহারও যেন মিষ্টমুখে দুটো ভদ্রতার কথা বলিয়। যাইবারও অবসর নাই। মনের ভিতর এমন আঁচড় দিয়া না গিয়া আর-একটু গভীরতররূপে কৰ্ষণ করিয়া গেলে ভালো হইত। যখন এই-সকল কথা ভাবিতেছিলাম তখন ‘রাজসিংহের ভিতরে গিয়া প্রবেশ করি নাই। পর্বত হইতে প্রথম বাহির হইয়া যখন নিঝরগুলা পাগলের মতো ছুটিতে আরম্ভ করে তখন মনে হয় তাহার খেলা করিতে বাহির হইয়াছে মনে হয় মা তাহার কোনো কাজের। পৃথিবীতেও তাহারা গভীর চিহ্ন অঙ্কিত করিতে পারে না। কিছুদূর তাহদের পশ্চাতে অনুসরণ করিলে দেখা যায় নিৰ্বরগুলা নদী হইতেছে— ক্রমেই গভীরতর হইয়া ক্রমেই প্রশস্ততর হইয়া পর্বত ভাঙিয়া পথ কাটিয়৷ জয়ধ্বনি করিয়া মহাবলে অগ্রসর হইতেছে– সমুদ্রের মধ্যে মহাপরিণাম প্রাপ্ত হইবার পূর্বে তাহার আর বিশ্রাম নাই। ‘রাজসিংহেও তাই। তাহার এক-একটি খণ্ড এক-একটি নিবরের মতে দ্রুত ছুটিয়া চলিয়াছে। প্রথম-প্রথম তাহাতে কেবল আলোকের ঝিকিঝিকি এবং চঞ্চল লহরীর তরল কলধ্বনি— তাহার পর ষষ্ঠ খণ্ডে দেখি ধ্বনি গম্ভীর, স্রোতের পথ গভীর এবং জলের বর্ণ ঘনকৃষ্ণ হইয়া আসিতেছে, তাহার পর সপ্তম খণ্ডে দেখি কতক-বা নদীর স্রোত, কতক-বা সমুদ্রের তরঙ্গ, কতক-বা অমোঘ পরিণামের মেঘগম্ভীর গর্জন, কতক-বা তীব্র লবণাশ্ৰুনিমগ্ন হৃদয়ের সুগভীর ক্ৰন্দনোচ্ছাস, কতক-ব৷ কালপুরুষলিখিত ইতিহাসের অব্যাকুল বিরাট বিস্তার, কতক-বা ব্যক্তিবিশেষের মজ্জমান তরণীর প্রাণপণ হাহাধ্বনি। সেখানে নৃত্য অতিশয় রুদ্র, ক্ৰন্দন অতিশয় তীব্র এবং ঘটনাবলী ভারত-ইতিহাসের একটি যুগাবসান হইতে যুগান্তরের দিকে ব্যাপ্ত হইয়া গিয়াছে। ‘রাজসিংহ ঐতিহাসিক উপন্যাস। ইহার নায়ক কে কে ? ঐতিহাসিক অংশের নায়ক ঔরংজেব, রাজসিংহ এবং বিধাতাপুরুষ— উপন্যাস-অংশের নায়ক আছে কি ন৷ জানি না, নায়িক। জেবউন্নিসা। রাজসিংহ, চঞ্চলকুমারী, নির্মলকুমারী, মানিকলাল প্রভৃতি ছোটোবড়ো অনেকে মিলিয়া সেই মেঘদুদিন রথযাত্রার দিনে ভারত-ইতিহাসের রথরজ্জ্ব আকর্ষণ করিয়৷ দুর্গম বন্ধুর পথে চলিয়াছিল। তাহদের মধ্যে অনেকে লেখকের কল্পনাপ্রস্থত হইতে পারে তথাপি তাহার এই ঐতিহাসিক উপন্যাসের ঐতিহাসিক অংশেরই অন্তর্গত। তাহদের জীবন-ইতিহাসের, তাহাদের স্বথদুঃখের স্বতন্ত্র মূল্য নাই— অর্থাৎ $