পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী ریا-8b আষাঢ়ে লেখক তাহার নাম প্রকাশ করেন নাই। সুতরাং আমরাও র্তাহার নাম উল্লেখ করিতে পারিলাম না। কিন্তু ইহা নিশ্চয়, বাংলা-পাঠকসমাজে তাহার নাম গোপন থাকিবে না । ‘আষাঢ়ে কতকগুলি হাস্যরসপ্রধান কবিতা। তাহার অনেকগুলিই গল্প-আকারে রচিত। গল্পগুলিকে ‘আষাঢ়ে’ আখ্যা দিয়া গ্রন্থকার পাঠকদিগকে পূর্ব হইতেই প্রস্তুত করিয়া রাখিয়াছেন। কারণ, আমরা বাঙালি পাঠকেরা অত্যন্ত গম্ভীর প্রকৃতির লোক। বেরসিক বর যেমন বাসরঘরের অপ্রত্যাশিত রসিকতায় খাপা হইয়া উঠে আমরাও তেমনি ছাপার বই খুলিয়া হঠাৎ আদ্যোপাস্ত কৌতুক দেখিতে পাইলে ছিব লামি সহ করিতে পারি না । বইখানির মধ্যে গায়ে বাজে এমনতরো কৌতুকও আছে। ইহার শেষ কবিতার নাম ‘কৰ্ণবিমৰ্দন । কিন্তু এই মর্দন-ব্যাপারটি সকল কবিতাতেই কিছু-না কিছু অাছে s গল্পপ্রসঙ্গে সামাজিক কপটতার যে-অংশটাই কবির হাতের কাছে আসিয়াছে সেইখানেই তিনি একটুখানি সহাস্য টিপ্পনী প্রয়োগ করিয়াছেন। এরূপ প্রকৃতির রহস্য-কবিতা বাংলা সাহিত্যে সম্পূর্ণ নূতন এবং ‘আষাঢ়ের কবি অপূর্ব প্রতিভাবলে ইহার ভাষা, ভঙ্গি, বিষয় সমস্তই নিজে উদ্ভাবন করিয়া লইয়াছেন। ভাষা ও ছন্দ সম্বন্ধে গ্রন্থকার ভূমিকায় লিখিয়াছেন— "এ কবিতাগুলির ভাষা অতীব অসংযত ও ছন্দোবন্ধ অতীব শিথিল । ইহাকে সমিল গদ্য নামেই অভিহিত করা সংগত। কিন্তু যেরূপ বিষয় সেইরূপ ভাষা হওয়া বিধেয় মনে করি। হরিনাথের শ্বশুরবাড়ি-যাত্র। বর্ণনা করিতে মেঘনাদবধের দুন্দুভিনিনাদের ভাষা ব্যবহার করিলে চলিবে কেন ? ভাষা সম্বন্ধে কবি যাহা লিখিয়াছেন সে ঠিক কথা। কিন্তু ছন্দ সম্বন্ধে তিনি কোনে কৈফিয়ত দেন নাই এবং দিলেও আমরা গ্রহণ করিতে পারিতাম না । পদ্যকে সমিল গদ্যরূপে চালাইবার কোনো হেতু নাই। ইহাতে পদ্যের স্বাধীনতা বাড়ে না, বরঞ্চ কমিয়া যায়। কারণ কবিতা পড়িবার সময় পষ্ঠের নিয়ম রক্ষা করিয়া পড়িতে স্বতই চেষ্টা জন্মে, কিন্তু মধ্যে মধ্যে যদি স্থলন হইতে থাকে তবে তাহ বাধাজনক ও পীড়াদায়ক হইয়া উঠে । 虚 বায়রনের ডন জুয়ানে কবি অবলীলাক্রমে যথেচ্ছ কৌতুকের অবতারণা করিয়া