পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধুনিক সাহিত্য ৫২৩ ‘সাহিত্যে মিতাচরণেই বড়ো লেখককে চেনা যায়। শৃঙ্খলা এবং অপ্রমত্তত ব্যতীত প্রাজ্ঞতা হইতে পারে না এবং প্রাজ্ঞতা ব্যতীত মহত্ত্ব সম্ভবপর নহে।’ ‘ভালো করিয়া লিখিতে গেলে স্বাভাবিক অনায়াসত এবং অভ্যস্ত আয়াসের প্রয়োজন ? পূর্বোক্ত কথাটার তাৎপর্য এই যে, ভালো লেখকের লিখনশক্তিটা স্বাভাবিক, কিন্তু সেই শক্তিটাকে বিচারের দ্বারা পদে পদে নিয়মিত করাটা অভ্যাসসাধ্য। সেই স্বাভাবিক শক্তির সঙ্গে যখন এই অভ্যস্ত শক্তির সম্মিলন হয় তখনই যথার্থ ভালো লেখা বাহির হয়। ভালো লেখক অনায়াসেই লিখিতে পারে, কিন্তু লিখিবার জন্য পদে পদে আয়াস স্বীকার করিয়া থাকে । ‘প্রাচুর্যের ক্ষমতাটা লেখকের থাকা চাই, অথচ তাহ ব্যবহার করিয়া যেন সে অপরাধী না হয়। কারণ, কাগজ ধৈর্যশীল, পাঠক ধৈর্যশীল নহে ; পাঠকদের ক্ষুধা অপেক্ষা পাঠকের মুখ মরিয়া যাওয়াকেই বেশি ভয় করা উচিত।’ ‘প্রতিভা মহৎকার্যের সূত্রপাত করে কিন্তু পরিশ্রম তাহ সমাধা করিয়া দেয়।’ ‘একটা ভালো বই রচনা করিতে তিনটি জিনিসের দরকার— ক্ষমতা, বিদ্যা এবং নৈপুণ্য। অর্থাৎ স্বভাব, পরিশ্রম এবং অভ্যাস।” ‘লিখিবার সময় কল্পনা করিতে হইবে যেন বাছা বাছ কয়েকজন সুশিক্ষিত লোকের সম্মুখে উপস্থিত আছি অথচ তাহাদিগকে লক্ষ্য করিয়া লিখিতেছি না।’ অর্থাৎ লেখা কেবল বাছ বাছ লোকের পড়িবার যোগ্য হইলে হইবে না ; তাহ। জনসাধারণের উপযুক্ত হইবে অথচ বিশিষ্ট মণ্ডলীর পছন্দসই হওয়া চাই । ‘ভাবকে তখনই সম্পূর্ণ বলা যায় যখন তাহা হাতের কাছে প্রস্তুত হইয়া আসে– অর্থাৎ যখন তাহাকে যেমন ইচ্ছা পৃথক করিয়া লওয়া এবং যেখানে ইচ্ছা স্থাপন করা যায় ।” ழ் অধিকাংশ লোকেরই মনে অধিকাংশ ভাব জড়িত-মিশ্রিত অবস্থায় থাকে, তাহদিগকে আকারবদ্ধ ও পৃথক করিয়া লইতে না পারিলে বিশেষ কাজে লাগানো যায় না। জুবেয়ার নিজে সর্বদাই তাহার ভাবগুলিকে আকার ও স্বাতন্ত্র্য দান করিয়৷ তাহাদের প্রত্যেকটিকে যেন ব্যবহারযোগ্য করিয়া রাখিয়াছিলেন । এইরূপে র্তাহার মনের প্রত্যেক ভাবের সহিত স্পষ্ট পরিচয় স্থাপন করাই তাহার কাজ ছিল। ‘রচনাকালে, আমরা যে কী বলিতে চাই তাহ ঠিকটি জানি না, যতক্ষণ না বলিয়। ফেলি। বস্তুত কথাই ভাবকে সম্পূর্ণত এবং অস্তিত্ব দান করে। ‘ভালো সাহিত্যগ্রন্থে উন্মত্ত করে না, মুগ্ধ করে।’

  • |\98