পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

({ २8 রবীন্দ্র-রচনাবলী “যাহা বিস্ময়কর তাহ একবার মাত্র বিস্মিত করে, যাহা মনোহর তাহার মনোহারিতা উত্তরোত্তর বাড়িতে থাকে।’ লেখার স্টাইল সম্বন্ধে জুবেয়ারের অনেকগুলি বচন আছে। কিন্তু স্টাইলকে বাংলায় কী বলিব ? চলিত শব্দ হইলেই ভালো হয়, আলংকারিক পরিভাষা সর্বদা ব্যবহারযোগ্য হয় না। বাংলা ছাদ কথা স্টাইলের মোটামুটি প্রতিশব্দ বলা যাইতে পারে। কিন্তু তাহার দোষ এই যে, শুধু ছাদ কথাটা ব্যবহার বাংলায় রীতি নহে। বলিবার ছাদ, লিখিবার ছাদ ইত্যাদি না বলিলে কথাটা সম্পূর্ণ হয় না। সংস্কৃত ভাষায় স্থলবিশেষে রীতি শব্দে স্টাইল বুঝায়। যথা মাগধী রীতি বৈদভী রীতি ইত্যাদি । মগধে যে বিশেষ স্টাইল প্রচলিত তাহাই মাগধী রীতি, বিদর্ভের প্রচলিত স্টাইল বৈদভী রীতি। এইরূপ, ব্যক্তিবিশেষের লেখায় তাহার একটি স্বকীয় রীতিও থাকিতে পারে— যুরোপীয় অলংকারে সেই স্টাইলের বহুল আলোচনা দেখা যায় । (, তথাপি অনুবাদ করিতে বসিলে দেখা যাইবে, রীতি অথবা ছাদ সর্বত্রই স্টাইলের প্রতিশব্দরূপে প্রয়োগ করিলে ভাষার প্রথা-বিরুদ্ধ হইয় পড়ে। একটি উদাহরণ দিই ; জুবেয়ার বলিয়াছেন, স্টাইলের চালাকিতে ভুলিয়ো না ( Beware of tricks of style)। এ স্থলে রীতি' অথবা ছাদ ঠিক এ ভাবে চলে না। কিন্তু একটু ঘুরাইয়া বলিলে কাজ চালানো যায়— লেখার ছাদের মধ্যে যদি চালাকি থাকে তাহ দেখিয়া ভুলিয়ে না— অথবা, লিখনরীতির চাতুরীতে ভুলিয়ে না। কিন্তু যেখানে স্টাইল কথাটা ব্যবহার করিলে সুবিধা পাওয়া যাইবে সেখানে আমরা প্রতিশব্দ বসাইবার চেষ্টা করিব না। n ডুসোন্ট, বলেন, মনের অভ্যাস হইতে স্টাইলের উৎপত্তি। কিন্তু অন্তঃপ্রকৃতির অভ্যাস হইতে যাহাঁদের স্টাইল গঠিত তাহারাই ধন্য ।” অনুবাদে আমরা সাহস করিয়া প্রকৃতি’ শব্দটা ব্যবহার করিয়াছি। মূলে যে কথা আছে তাহার ইংরাজি প্রতিশব্দ soul । এ স্থলে ‘আত্মা’ কথা বলা যায় না, তাহার দার্শনিক অর্থ অন্তপ্রকার। এখানে ‘সোল’ শব্দের অর্থ এই যে, তাহা মনের ন্যায় আংশিক নহে। মন তাহার অধীন। মন হৃদয় ও চরিত্র তাহার অঙ্গ— এই ‘সোল’ শব্দ দ্বারা মানসিক সমগ্রতা প্রকাশ হইতেছে। ‘অন্তঃপ্রকৃতি’ শব্দ দ্বারা যদি এই অখণ্ড মানসতন্ত্রের ঐক্যটি না বুঝায় তবে পাঠকের উপযুক্ত শব্দ ভাবিয়া লইবেন। জুবেয়ারের কথাটার তাৎপর্য এই যে, মন তো চিস্তার যন্ত্র, তাহার চালনা দ্বারা