পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট (\రి) আবশ্বক। যদি মৃত্যুর ন্যায় এমন গুরুতর ঘটনাতেও স্বেচ্ছাচারী ব্যক্তিবিশেষের ব্যবহারে পিতৃভক্তির অভাব প্রকাশ পায় অথবা সাধারণের নিকট সে ভক্তি গোপন থাকে তবে সেই দৃষ্টান্ত সমাজের মূলে গিয়া আঘাত করে। সে স্থলে আত্মরক্ষার্থে ব্যক্তিগত শোক এবং ভক্তি –প্রকাশকেও সমাজ নিয়মের দ্বারা বাধিয়া দিতে বাধ্য হয়। এবং সর্বসাধারণের জন্য যে নিয়ম বাধিতে হয় তাহাতে ব্যক্তিবিশেষের প্রকৃতিবৈচিত্র্যের পরিমাপ কখনোই রক্ষিত হইতে পারে না। এইজন্য অকৃত্রিম প্রবল শোকের পক্ষে সাধারণ নিয়ম অনেক সময় কঠিন পীড়াদায়ক হইতে পারে তথাপি সমাজের প্রতি কর্তব্যের অনুরোধে গুরুতর শোকের সময়ও অনুষ্ঠানবিধির প্রত্যেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঙ্গপ্রত্যঙ্গও সযত্বে রক্ষা করিয়া চলিতে হয়। সকলেই স্বীকার করিবেন, ঈশ্বরের সহিত ভক্তের সম্বন্ধ সর্বাপেক্ষা নিগৃঢ় সম্বন্ধ। তাহা দেশকালে বিচ্ছিন্ন নহে। পিতা মাতা স্ত্রী পুত্র স্বামী কেহই আমাদের চিরদিনের নহে এরূপ বৈরাগ্যসংগীত ভারতবর্ষের পথে পথে ধ্বনিত হইয়া থাকে— অতএব যাহাদের সহিত কেবল আমাদের ইহজীবনের সামাজিক সম্পর্ক, সমাজ তাহীদের সম্বন্ধে আমাদিগকে সর্বপ্রকার নিয়মের দ্বারা বাধ্য করিতে পারে, কিন্তু র্যাহার সহিত আমাদের অনন্তকালের ঘনিষ্ঠ যোগ, তাহাতে-আমাতে স্বতন্ত্র স্বাধীন সম্বন্ধ থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের সমাজ তাহাতেও আমাদের স্বাধীনতা দেয় নাই। ঈশ্বরকে কী মূর্তিতে কী ভাবে কী উপায়ে পূজা করিতে হইবে তাহ কেবল উপদেশ দিয়াই ক্ষান্ত হয় নাই, অনুশাসনের দ্বারা বদ্ধ করিয়া দিয়াছে। কোন ফুল উপহার দিতে হইবে এবং কোন ফুল দিতে হইবে না তাহাও তাহার আদেশ অনুসারে পালন করিতে হইবে। যে মন্ত্রের দ্বারা পূজা করিতে হইবে তাহা না বুঝিলেও ক্ষতি নাই কিন্তু নিজের হৃদয়ের অনুবর্তী হইয়া সে মস্ত্রের পরিবর্তন করিলে চলিবে না। অতএব, আমাদের জীবনের যে অংশ একেবারে অন্তরতম, যাহা সমস্ত সমাজ এবং সংসারের অতীত সেই অন্তর্যামী পুরুষের উদ্দেশে একান্তভাবে উৎসর্গীকৃত, সাধারণ-মঙ্গলের উপলক্ষ করিয়৷ সমজি সেখানেও আপনার সংকীর্ণ শাসন স্থাপন করিয়াছে। সর্বত্রই সমাজের অপ্রতিহত ক্ষমতা ভালো কি মন্দ সে তর্ক এখানে উত্থাপন করা অপ্রাসঙ্গিক। আমি দেখাইতে চাই যে, ভ্রমক্রমেই হউক বা স্ববিচারপূর্বকই হউক, সমাজ যেখানেই আবশ্বক বোধ করিয়াছে সেখানে ব্যক্তিগত হৃদয়ের ভাবকে নিজের বিধি অনুসারে প্রকাশ করিতে সমাজস্থ ব্যক্তিগণকে বাধ্য করিয়াছে। তাহাতে সমাজের অনেক কার্য সরল হইয়া আসে এবং তাহার অনেক সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয়। আমাদের সমাজ গার্হস্থ্যপ্রধান সমাজ। পিতামাতা এবং গৃহের কর্তৃস্থানীয় 翰