পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট ○○2 বন্ধুর দ্বারাই সম্ভব। অর্থ এবং উৎসাহীভাবে আমাদের দেশের বড়োলোকদের প্রস্তরমুতি প্রতিষ্ঠা হয় না বলিয়া মনে আক্ষেপ হয় কিন্তু তদপেক্ষ। আক্ষেপের বিষয় এই যে, যাহারা তাহাদিগকে প্রস্তরমূর্তির অপেক্ষ সজীবতরভাবে আমাদের হৃদয়ে স্থাপিত করিতে পারেন র্তাহার সে কর্তব্যকে যথেষ্ট গুরুতর মনে করেন না । মৃত্যুর পরে এই বন্ধুকৃত্য অবশুপালনীয়। সভাস্থলে মৃতবন্ধুর সম্বন্ধে আলোচনা করা অত্যন্ত কঠিন কার্য। এবং সে কর্তব্যপালনে যদি কেহ কুষ্ঠিত হন তবে তাহাকে দোষ দেওয়া যায় না। কিন্তু লেখায় সে আপত্তি থাকিতে পারে না। যেমন আকারে হউক আমরা প্ৰিয়বন্ধুর হস্ত হইতে পাব্লিক-বন্ধুর প্রতিমূর্তি প্রত্যাশা করি। জীবনের যবনিক অনেক সময় মনুষকে আচ্ছন্ন করিয়া রাখে। মৃত্যু যখন সেই যবনিক ছিন্ন করিয়া দেয় তখন মানুষ সমগ্রভাবে আমাদের নিকট প্রকাশ হয়। প্রতিদিন এবং প্রতিমুহূর্তের ভিতর দিয়া যখন আমরা তাহাকে দেখি তখন তাহাকে 'কখনও ছোটে৷ কখনও বড়ো, কখনও মলিন কখনও উজ্জল দেখিতে হয় । কিন্তু মৃত্যুর আকাশ ধূলিহীন স্বচ্ছ, নিমেষে নিমেষে তাহার পরিবর্তন নাই। সেই মৃত্যুর মধ্যে স্থাপন করিয়া দেখিলে মানুষকে কতকটা যথার্থভাবে দেখা যাইতে পারে। যাহার জ্যোতিষ্ক পর্যবেক্ষণ করিয়া থাকেন তাহারা বলেন, আমাদের চতুর্দিকৃবর্তী বায়ুস্তর এই পর্যবেক্ষণের পক্ষে অত্যন্ত বাধাজনক। বিশেষত বায়ুর নিম্নস্তরগুলি সর্বাপেক্ষ অস্বচ্ছ। এইজন্য পর্বতশিখর জ্যোতিষ্ক পর্যবেক্ষণের পক্ষে অনুকুল স্থান। মানব-জ্যোতিষ্ক পর্যবেক্ষণেও আমাদের চতুর্দিকস্থ বায়ুস্তরে অনেক বিঘ্ন দিয়! থাকে। আবর্তিত আলোড়িত সংসারে উডউীয়মান বিচিত্র অণুপরমাণু দ্বারা এই বায়ু সর্বদা আচ্ছন্ন। ইহাতে মহত্ত্বের আলোকরশ্মিকে স্থানভ্রষ্ট পরিমাণভষ্ট করিয়া দেখায়। বর্তমানের এই আবিল বায়ুতে অনেক সময় কিরণরেখা অযথা বৃহৎ দেখিতেও হয়, কিন্তু সে বৃহত্ত্ব বড়ে অপরিস্ফুট— কিরণটিকে যথাপরিমাণে দেখিতে পাইলে হয়তে তাহার হ্রাস হইতে পারিত কিন্তু তাহার প্রস্ফুটত উজ্জ্বলতা অনেক পরিমাণে বৃদ্ধি পাইত। ' মৃত্যু পর্বতশিখরের ন্যায় আমাদিগকে এই ঘন বায়ুস্তর হইতে স্বচ্ছ আকাশে লইয়৷ যায়, যেখানে মহত্বের সমস্ত রশ্মিগুলি নির্মল অব্যাহত ভাবে আমাদের দৃষ্টিপথে আসিয় পড়ে । এই মৃত্যুশিখরে বন্ধুদিগের সাহায্যে আমাদের জ্যোতিষ্কদিগের সহিত আমরা পরিচিত হইতে চাহি । ।