পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় QWり〉 'যুগান্তর’ ( সাধনা, ১৩০১ চৈত্র ) প্রবন্ধের সূচনায় ‘সমালোচকের কাজ সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ লিখিয়াছেন— 暉 יו যাহারা বালি ধুইয়। হীরা বাহির করে তাহারা অনেক কাল বিস্তর বালি ঘাটিয়৷ এক টুকরা হীরার সন্ধান পায়। গ্রন্থ-সমালোচকের ভাগ্যেও হীরা সহজে মেলে না ; সেইজন্য বহুকাল বিস্তর নীরস এবং নিস্ফল পরিশ্রমের পর যেদিন একখানা যথার্থ গ্রন্থ হাতে আসে সেদিন আনন্দবেগে গ্রন্থকারকে মনুমেন্টের উপর তুলিয়া দিয়া জয়জয়কার করিতে ইচ্ছা করে। কিন্তু সমালোচকের কাজটা এমনি যে, তাহাকে পদে পদে আপন উচ্ছাস সম্বরণ করিয়া চলিতে হয়, যখন কৃতজ্ঞচিত্তে কুন খাইতেছি তখনও এই কথা মনে রাখিতে হয় কেবলই গুণ গাহিলে চলিবে না, যদি দোষ থাকে তাহাও গাহিতে হইবে।” এই প্রকার “উচ্ছ্বাস-সম্বরণ”এর দৃষ্টান্ত আধুনিক সাহিত্য’ -আলোচনায় বহু বর্তমান। প্রবন্ধগুলির মাসিকপত্রে মুদ্রিত পাঠ হইতে আর-কিছু দৃষ্টান্ত সংকলিত ट्रैल ‘আমাদের এই সমালোচ্য | আর্যগাথা ] গ্রন্থখানিতে কোনো কোনো গানে ইংরাজি প্রথার ভাষা আমাদের কানে খারাপ লাগিয়াছে। ইংরাজি ভাব গ্রহণ করিয়া আমাদের ভাষা ও সাহিত্যকে পরিপুষ্ট করিতে দোষ নাই কিন্তু এমন অনেকগুলি ভাব আছে যাহা আমাদের পক্ষে নিতান্তই বিদেশী, সেগুলি বাংলায় বর্জনীয় – “চেয়ে না বিরাগে মাখি হিম আঁখি তুলি মোর পানে” ইংরেজিতে cold শব্দের সহিত যে-একটি অপ্রিয় ভাবের যোগ আছে বাংলায় তাহা নাই এবং হইতেও পারে না। সেইজন্য হিম-আঁখি শব্দটা কানে বিজাতীয় বলিয়া ঠেকে। ইংরাজিতে love এবং hate দুই বিপরীতাৰ্থক শব্দ । স্থানভেদে hate শব্দের স্থলে বাংলায় ঘৃণা বিদ্বেষ বিরাগ প্রভৃতি নানাবিধ প্রতিশব্দ ব্যবহার হইতে পারে। আর্যগাথায় স্থানে স্থানে ঘৃণা শব্দের অপপ্রয়োগ হইয়াছে। পাষাণে বাধিব প্রাণে, অশ্রুপথে দিব বাধ— নীরবে হৃদয়ে পড়ি কাজুক মনের সাধ । কাদিব না দীনহীনা— কঠোর তাপসী ঘৃণা দিব তিক্ত ঢালি তারে— ক্ষমে। দেব অপরাধ । শেষ দুটি ছত্রের অর্থ বুঝাই কঠিন। বোধ করি ইহার অর্থ এইরূপ— আমি দীনহীনার স্যায় কাদিব না, কঠোর তাপসীর ন্যায় হইয়া ঘৃণারূপ তিক্ত পদার্থ তাহাকে