পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নটীর পূজা ՀՀԳ বাসবীনন্দ রত্নাবলী অজিতা মল্লিকা ভদ্রার প্রবেশ বাসবী। এ মেয়েটি কে ! দেখি দেখি, চুলচুড়া করে বেঁধেছে, অলকে দিয়েছে জবা ! নন্দা, দেখে যাও, আকদের মালা দিয়ে বেণী কী রকম উচু করে জড়িয়েছে। গলায় বুঝি কুঁচফলের হার ? শ্ৰীমতী, এ কোথা থেকে এল ? শ্ৰীমতী । গ্রাম থেকে । ওর নাম মালতী । রত্নাবলী । পেয়েছ একটি শিকার। ওকে শিষ্যা করবে বুঝি ? আমাদের উদ্ধার করতে পারলে না, এখন গ্রামের মেয়ে ধরে মুক্তির ব্যাবসা চালাবে! শ্ৰীমতী। গ্রামের মেয়ের মুক্তির ভাবনা কী ? ওখানে স্বর্গের হাতের কােজ ঢাকা পড়ে নি, না ধুলায়, না মণিমাণিক্যে ; স্বৰ্গ তাই আপনি ওদের চিনে নেয়। রত্নাবলী। স্বর্গে যদি না যাই সেও ভালো, কিন্তু তোমার উপদেশের জোরে যেতে চাই নে। গণেশের ইদুরের কৃপায় সিদ্ধিলাভ করতে আমার উৎসাহ নেই; বরঞ্চ যমরাজের মহিষটাকে মানতে রাজি আছি। নন্দ । রত্না, তোমার বাহন তো তৈরিই আছে, লক্ষ্মীর পেঁচা । দেখো তো অজিতা, শ্ৰীমতীকে নিয়ে কেন বিদ্রুপ ? ও তাে উপদেশ দিতে আসে না। বাসবী । ওর চুপ করে থাকাই তোরাশীকৃত উপদেশ। ঐ দেখো না, চুপিচুপি হাসছে। ওটা কি উপদেশ ठूल क्रा ? রত্নাবলী । মহৎ উপদেশ ! অর্থাৎ কিনা, মধুরের দ্বারা কাটুকে জয় করবে, হাস্যের দ্বারা ভাষ্যকে । বাসবী। একটু ঝগড়া করা-না কেন, শ্ৰীমতী ? এত মধুর কি সহ্য হয়! মানুষকে লজ্জা দেওয়ার চেয়ে মানুষকে রাগিয়ে দেওয়া যে ঢের ভালো। " শ্ৰীমতী । ভিতরে তেমন ভালো যদি হতেম বাইরে মন্দর ভান করলে সেটা গায়ে লগত না । কলঙ্কের ভান করা চাদকেই শোভা পায়। কিন্তু অমাবস্যা ! সে যদি মেঘের মুখোশ পরে } অজিতা । ঐ দেখো, গ্রামের মেয়েটি অবাক হয়ে ভাবছে, রাজবাড়ির মেয়েগুলোর রসনায় রস নেই, কেবল ধারই আছে। কী তোমার নাম, ভুলে গেছি। भाली । भली । অজিতা । কী ভাবছিলে বলো-না । মালতী । দিদিকে ভালোবেসেছি, তাই ব্যথা লাগছিল। অজিতা । আমরা যাকে ভালোবাসি তাকেই ব্যথা দেবার ছল করি। রাজবাড়ির অলংকারশাস্ত্রের এই নিয়ম । মনে রেখো । ভদ্রা। মালতী, কী একটা কথা যেন বলতে যাচ্ছিলে ? বলেই ফেলো-না। আমাদের তুমি কী ভাব । জানতে ভারি কৌতুহল হয়। r মালতী। আমি বলতে চাচ্ছিলেম, ই গা, তোমরা নিজের কথা শুনতেই এত ভালোবাস, গান শোনবার সময় বয়ে যায় ।” সকলের উচ্চহাস্য 衍 বাসবী। ই গা ! ই গা ! রাজবাড়ির ব্যাকরণচষ্ণুকে ডাকে, তার শিক্ষা সম্বোধনের শেষ পর্যন্ত পৌঁছয় r রত্নাবলী। ই গা বাসবী ! ই গা রাজকুলমুকুটমণিমালিকা ! শ্ৰী। ই গঙ্গালী ধৰ্গ ঢুকামোল্যকারী। বাকারে একীভূক্ত সম্পদ। সৰোবনে 히 ! মালতী । দিদি, ঐরা কি আমার উপরে রাগ করেছেন ? নন্দা। ভয় নেই তোমার মালতী। দিগবালিকারা শিউলিবনে যখন শিলাবৃষ্টি করে তখন রাগ করে করে নী, তাদের আদর করবার প্রথাই ঐ ।