পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নটীর পূজা Rමළ লোকেশ্বরী। চুপ চুপ! বলিস নে ! আমি হাত জোড় করে তাকে অনুরোধ করলেম ; বললেম, ‘একরাত্রির জন্যে তোমার মাতার ঘরে থেকে যাও । সে বললে, “আমার মাতার ঘরের উপরে ছাদ নেইআছে আকাশ।' 'মল্লিকা, যদি মাহতিস তো বুঝতিসকতবড়ো কঠিন কথা ! বীজ দেবতার হাতের, কিন্তু সে তো বঞ্জ। বুক বিদীর্ণ হয়ে যায় নি। সেই বিদীর্ণ বুকের ছিদ্রের ভিতর দিয়ে ঐ-যে রাস্তার শ্রমণদের গর্জন श्लश डि वाली लक्ष्य-चन्ता की साल की प्रया সরণং মল্লিকা। একি মহারানী, মস্ত্ৰোচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে আজও আপনি যে নমস্কার করেন। লোকেশ্বরী। ঐ তো বিপদ।। মল্লিকা, দুর্বলের ধর্ম মানুষকে দুর্বল করে। দুর্বল করাই এই ধর্মের উদেশ্য। যত উচু মাথাকে সব হেঁট করে দেবে। ব্ৰাহ্মণকে বলবে সেবা করো, ক্ষত্রিয়কে বলবে ভিক্ষা করো। এই ধর্মের বিষ অনেকদিন স্বেচ্ছায় নিজের রক্তের মধ্যে পালন করেছি। সেইজন্যে আজ আমিই একে সব চেয়ে ভয় করি। ঐ কে আসছে ? মল্লিকা। রাজকুমারী বাসবী। পূজাস্থলে যাবার জন্যে প্রস্তুত হয়ে এসেছেন। বাসবীর প্রবেশ লোকেশ্বরী। পূজায় চলেছ ? বাসবী । হঁহা । লোকেশ্বরী। তোমাদের তো বয়স হয়েছে ? : বাসবী । আমাদের ব্যবহারে তার কি কোনো বৈলক্ষণ্য দেখছেন ? লোকেশ্বরী। শিশু ! তোমরা নাকি বলে বেড়ােচ্ছ, অহিংসা পরমো ধৰ্মঃ ! বাসবী। আমাদের চেয়ে যাদের বয়স অনেক বেশি তারাই বলে বেড়াচ্ছেন, আমরা তো কেবল মুখে আবৃত্তি করি মাত্র। r লোকেশ্বরী । নির্বোিধকে কেমন করে বোঝােব অহিংসা ইতরের ধর্ম ! হিংসা ক্ষত্রিয়ের বিশাল বাহুতে মাণিক্যের অঙ্গদ, নিষ্ঠুর তেজে দীপ্যমান। বাসবী । শক্তির কি কোমল রূপ নেই ? লোকেশ্বরী। আছে, যখন সে ডোবায়। যখন সে দৃঢ় করে বাঁধে তখন না। পর্বতকে সৃষ্টিকর্তা নির্দয় পাথর দিয়ে গড়েছেন, পাক দিয়ে নয়। তোমাদের শুরুর কৃপায় উপর থেকে নীচে পর্যন্ত সবই কি হবে পাক ? রাজবাড়িতে মানুষ হয়েও এই কথাটা মানতে ঘূণা হয় না ? চুপ করে রইলে যে ? বাসবী । ভেবে দেখছি, মহারানী । লোকেশ্বরী। ভাববার কী আছে। চােখের সামনে দেখলে তো রাজপুত্র একমুহূর্তে রাজা হতে ভুলে গেল ! বলে গেল চরাচরকে দয়া করবার সাধনা করব ! শোন নি, বাসবী ? বাসবী । শুনেছি। লোকেশ্বরী । তা হলে নির্দয়তা করবার গুরুতর কাজ গ্রহণ করবে। কে ? কেউ যদি না করে তবে বীরভোগা বসুন্ধরার কী হবে। গতি ? যত সব মাথা-হেঁট-করা উপবাসজীৰ্ণ ক্ষীণকণ্ঠ মন্দগ্নিস্নান নিজীবের । সুস্থার দৃতির কম থাকবে ? তাের ক্ষৰিলে মেেয় কথাটা তােলে কাছেও নতুন কৈছেনে বাসবী। এই পুরানো কথাটা হঠাৎ আজ যেন একদিনে ঢাকা পড়ে গেছে, বসন্তে নিম্পত্র কিংশুকের শাখা যেমন করে ফুলে ঢেকে যায়। লোকেশ্বরী। কখনো কখনো বুদ্ধিভ্রংশ হয়ে পুরুষ আপন পীেরুষধর্ম ভুলে যায়, কিন্তু নারীরা যদি তাকে সেটা ভুলতে দেয় তা হলে মরণ যে সেই নারীর। মহালতার জন্যে কি মহাবৃক্ষের দরকার নেই! সব গাছই গুন্ম হয়ে গেলে কি তার পক্ষে ভালো ? বল না। মুখে যে উত্তর নেই! বাসবী। মহাবৃক্ষ চাই বৈকি।