পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●のやり রবীন্দ্র-রচনাবলী এমনি করিয়া প্রায় মাঝে মাঝে সন্ধ্যাবেলায় শ্ৰীপতির বাড়ি গিয়া কুসুমকে ডাকিয়া তোমার কথা পাড়িয়া ক্রমে তাহার লজ্জা ভাঙিলাম। অবশেষে প্রতিদিন ক্ৰমিক আলোচনা করিয়া তাহাকে বুঝাইলাম যে, বিবাহ ব্যতীত পথ দেখি না। তাহা ছাড়া মিলনের আর কোনো উপায় নাই। কুসুম কহিল, কেমন করিয়া হইবে। আমি কহিলাম, তোমাকে কুলীনের মেয়ে বলিয়া চালাইয়া দিব। অনেক তর্কের পর সে এ-বিষয়ে তোমার মত জানিতে কহিল। আমি কহিলাম, ছেলেটা একে খেপিয়া যাইবাৱ জোহইয়াছে, তাহাকে আবার এ-সকল গোলমালের কথা বলিবার আবশ্যক কী । কাজটা বেশ নিরাপত্তে নিশ্চিন্তে নিম্পন্ন হইয়া গেলেই সকল দিকে সুখের হইবে। বিশেষত এ কথা যখন কখনাে প্রকাশ হইবার কোনাে সম্ভাবনা নাই তখন বেচারকে কেন গায়ে পড়িয়া চিরজীবনের মতো অসুখী করা। “কুসুম বুঝিল কি বুঝিল না, আমি বুঝিতে পারিলাম না। কখনো কঁদে কখনাে চুপ করিয়া থাকে। অবশেষে আমি যখন বলি। তবে কাজ নাই তখন আবার সে অস্থির হইয়া উঠে । এইরূপ অবস্থায় শ্ৰীপতিকে দিয়া তোমাকে বিবাহের প্রস্তাব পাঠাই। দেখিলাম সম্মতি দিতে তোমার তিলমাত্র বিলম্ব হইল না। তখন বিবাহের সমস্ত ঠিক হইল। . “বিবাহের অনতিপূর্বে কুসুম এমনি বাকিয়া দাঁড়াইল তাঁহাকে আর কিছুতেই বাগাইতে পারি না। সে আমার হাতে পায়ে ধরে, বলে, ইহাতে কাজ নাই, জ্যাঠামশায়। আমি বলিলাম, কী সর্বনাশ, সমস্ত স্থির হইয়া গেছে, এখন কী বলিয়া ফিরাইব । কুসুম বলে, তুমি রাষ্ট্র করিয়া দাও আমার হঠাৎ মৃত্যু হইয়াছে, আমাকে এখান হইতে কোথাও পাঠাইয়া দাও। আমি বলিলাম, তাহা হইলে ছেলেটির দশা কী হইবে। তাহার বহুদিনের আশা কাল পূর্ণ হইবে বলিয়া সে স্বর্গে চড়িয়া বসিয়ছে, আজ আমি হঠাৎ তাহাকে তোমার মৃত্যুসংবাদ পঠাইব ! আবার তাহার পরদিন তোমাকে তাহার মৃত্যুসংবাদ পঠাইতে হইবে, এবং সেইদিন झा या काळ व्या श्या श्ल १ - लग्या या काठ “তাহার পর শুভলগ্নে শুভবিবাহ সম্পন্ন হইল- আমি আমার একটা কর্তব্যদায় হইতে অব্যাহতি পাইয়া বঁচিলাম। তাহার পর কী হইল তুমি জান ।” হেমন্ত কহিল, “আমাদের যাহা করিবার তাহা তো করিলেন, আবার কথাটা প্রকাশ করিলেন কেন।” প্যারিশংকর কহিলেন, “দেখিলাম তোমার ছোটাে ভগ্নীর বিবাহের সমস্ত স্থির হইয়া গেছে। তখন মনে মনে ভাবিলাম, একটা ব্ৰাহ্মণের জাত মারিয়াছি কিন্তু সে কেবল কর্তব্যবোধে। আবার আর-একটা ব্ৰাহ্মণের জাত মারা পড়ে, আমার কর্তব্য এটা নিবারণ করা। তাই তাহদের চিঠি লিখিয়া দিলাম। বলিলাম, হেমন্ত যে শূদ্রের কন্যা বিবাহ করিয়াছে তাহার প্রমাণ আছে।” হেমন্ত বহুকষ্টে ধৈর্য সংবরণ করিয়া কহিল, “এই যে মেয়েটিকে আমি পরিত্যাগ করিব, ইহার দশা কী হইবে। আপনি ইহাকে আশ্রয় দিবেন ?” । প্যারিশংকর কহিলেন, “আমার যাহা কাজ তাহা আমি করিয়াছি, এখন পরের পরিত্যক্ত স্ত্রীকে পোষণ করা আমার কর্ম নহে ।- "ওরে, হেমন্তবাবুর জন্য বরফ দিয়া একগ্লাস ডাবের জল লইয়া আয়, আর পান আনিস ।” ” হেমন্ত এই সুশীতল আতিথ্যের জন্য অপেক্ষা না করিয়া চলিয়া গেল। চতুর্থ পরিচ্ছেদ কৃষ্ণপক্ষের পঞ্চমী। অন্ধকার রাত্রি। পাখি ডাকিতেছে না। পুষ্করিণীর ধারের লিচুগাছটি কালো চিত্রপটের উপর গাঢ়তর কালির দাগের মতো লেপিয়া গেছে। কেবল দক্ষিণের বাতাস এই অন্ধকারে অন্ধভাবে ঘুরিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতেছে, যেন তাহাকে নিশিতে পাইয়াছে। আর আকাশের তারা নির্নিমেষ সতর্ক নেত্রে প্রাণপণে অন্ধকার ভেদ করিয়া কী একটা রহস্য আবিষ্কার করিতে প্ৰবৃত্ত আছে।