পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ଏ}ଓ রবীন্দ্র-রচনাবলী । প্রকাশ করা আবশ্যক। মৃন্ময়ীও তাঁহা বুঝিল ; এইজন্য আরো অনেকক্ষণ ভাবিয়া ভাবিয়া আর কয়েকটি নূতন কথা যোগ করিয়া দিল— এইবার তুমি আমাকে চিঠি লিখে, আর কেমন আছ লিখে, আর বাড়ি এসো, মা ভালো আছেন, বিশু পুঁট ভালো আছে, কাল আমাদের কালো গোরুর বাছুর হয়েছে। এই বলিয়া চিঠি শেষ করিল। চিঠি লেফাফায় মুড়িয়া প্রত্যেক অক্ষরটির উপর একটি ফোটা করিয়া মনের ভালোবাসা দিয়া লিখিল, শ্ৰীযুক্ত বাবু অপূর্বকৃষ্ট রায়। ভালোবাসা যতই দিক, তবু লাইন সােজা, অক্ষর সুইদ এবং बानान ९७६ श्न नां । লেফাফায় নামটুকু ব্যতীত আরো যে কিছু লেখা আবশ্যক মৃন্ময়ীর তাহা জানা ছিল না। পাছে শাশুড়ি অথবা আর কাহারও দৃষ্টিপথে পড়ে সেই লজ্জায় চিঠিখনি একটি বিশ্বন্ত দাসীর হাত দিয়া ডাকে পাঠাইয়া झेिळ | বলা বাহুল্য এ পত্রের কোনাে ফল হইল না, অপূর্ব বাড়ি আসিল না। অষ্টম পরিচ্ছেদ মা দেখিলেন, ছুটি হইল। তবু অপূর্ব বাড়ি আসিল না। মনে করিলেন এখনো সের্তাহার উপর রাগ করিয়া আছে । মৃন্ময়ীও স্থির করিলা অপূর্ব তাহার উপর বিরক্ত হইয়া আছে, তখন আপনার চিঠিখনি মনে করিয়া সে লজ্জায় মরিয়া যাইতে লাগিল। সে চিঠিখানা যে কত তুচ্ছ, তাহাতে যে কোনো কথাই লেখা হয় নাই, তাহার মনের ভাব যে কিছুই প্রকাশ করা হয় নাই, সেটা পাঠ করিয়া অপূর্ব যে মৃন্ময়ীকে আরো ছেলেমানুষ মনে করিতেছে, মনে মনে আরো অবজ্ঞা করিতেছে, ইহা ভাবিয়া সে শরবিদ্ধের ন্যায় অন্তরে অন্তরে ছটফট করিতে লাগিল। দাসীকে বার বার করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “সে চিঠিখানা তুই কি ডাকে দিয়ে এসেছিস ।” দাসী তাহাকে সহস্রবার আশ্বাস দিয়া কহিল, “ই গো, আমি নিজের হাতে বাক্সের মধ্যে ফেলে দিয়েছি, বাবু তা এতদিনে কোনকালে পেয়েছে।” অবশেষে অপূর্বর মা একদিন মৃন্ময়ীকে ডাকিয়া কহিলেন, “বউমা, অপু অনেকদিন তো বাড়ি এল না, তাই মনে করছি। কলকাতায় গিয়ে তাকে দেখে আসি গে। তুমি সঙ্গে যাবে ?” মৃন্ময়ী সম্মতিসূচক ঘাড় নড়িল এবং ঘরের মধ্যে আসিয়া দ্বার রুদ্ধ করিয়া বিছানার উপর পড়িয়া বালিশাখানা বুকের উপর চাপিয়া ধরিয়া হাসিয়া নড়িয়া-চড়িয়া মনের আবেগ উন্মুক্ত করিয়া দিল ; তাহার পর ক্রমে গভীর হইয়া বিষগ্ন হইয়া আশঙ্কায় পরিপূর্ণ হইয়া বসিয়া কঁদিতে লাগিল। : অপূর্বক কোনাে খবর না দিয়া এই দুটি অনুতপ্ত রমণী তাহার প্রসন্নতা ভিক্ষা করিবার জন্য কলিকাতায় যাত্রা করিল। অপূৰ্বর মা সেখানে তঁহার জামাইবাড়িতে গিয়া উঠিলেন। সেদিন মৃন্ময়ীর পত্রের প্রত্যাশায় নিরাশ হইয়া সন্ধ্যাবেলায় অপূর্ব প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করিয়া নিজেই তাঁহাকে পত্র লিখিতে বসিয়াছে। কোনো কথাই পছন্দমতো হইতেছে না। এমন একটা সম্বোধন খুঁজিতেছে যাহাতে ভালোবাসাও প্রকাশ হয়। অথচ অভিমােনও ব্যক্ত করে ; কথা না পাইয়া মাতৃভাষার উপর অশ্রদ্ধা দৃঢ়তর হইতেছে। এমন সময় ভগ্নীপতির নিকট হইতে পত্ৰ পাইল, মা আসিয়াছেন, শীঘ্ৰ আসিবে এবং রাত্রে এইখানেই আহারাদি করিবে। সংবাদ সমস্ত ভালো - শেষ আশ্বাস সত্ত্বেও অপূর্ব অমঙ্গলশঙ্কায় বিমৰ্ষ হইয়া উঠিল। অবিলম্বে ভগীর বাড়ি গিয়া উপস্থিত হইল। সাক্ষাৎমাত্ৰই মাকে জিজ্ঞাসা করিল, “মা, সব ভালো তো।” মা কহিলেন, “সব ভালো। তুই ছুটিতে বাড়ি গেলি না, তাই আমি তোকে নিতে এসেছি।” কােল, ”গেল এণ্ড শ বডয়া অপাের ঐ অঞ্চল হিল, আই-পকার পাঞ্চল 阿| আহারের সময় ভগ্নী জিজ্ঞাসা করিল, “দাদা, এবার বউকে তোমার সঙ্গে আনলে না কেন ।” দাদা গভীরভাবে কহিতে লাগিল, “আইনের পড়াশুনা” ইত্যাদি।