পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবনস্মৃতি 80 কবিতা-রচনারম্ভ আমার বয়স তখন সাত-আট বছরের বেশি হইবে না। আমার এক ভাগিনেয় শ্ৰীযুক্ত জ্যোতিঃপ্রকাশ”। আমার চেয়ে বয়সে বেশ একটু বড়ো। তিনি তখন ইংরেজি সাহিত্যে প্রবেশ করিয়া খুব উৎসাহের সঙ্গে হ্যামলেটের স্বগত উক্তি আওড়াইতেছেন। আমার মতাে শিশুকে কবিতা লেখাইবার জন্য তাহার হঠাৎ কেন যে উৎসাহ হইল তাহা আমি বলিতে পারি না। একদিন দুপুরবেলা ঠাঁহার ঘরে ডাকিয়া লইয়া বলিলেন, “তোমাকে পদ্য লিখিতে হইবে।” বলিয়া, পয়ারছন্দে চৌদ্দ অক্ষর যোগাযোগের রীতিপদ্ধতি আমাকে বুঝাইয়া দিলেন। - পদ্য-জিনিসটিকে এ-পর্যন্ত কেবল ছাপার বহিতেই দেখিয়ছি। কাটাকুটি নাই, ভাবচিন্তা নাই, কোনোখানে মর্ত্যজনােচিত দুর্বলতার কোনাে চিহ্ন দেখা যায় না। এই পদ্য যে নিজে চেষ্টা করিয়া লেখা যাইতে পারে, এ কথা কল্পনা করিতেও সাহস হইত না। একদিন আমাদের বাড়িতে চাের ধরা পড়িয়াছিল। অত্যন্ত ভয়ে ভয়ে অথচ নিরতিশয় কীেতুহলের সঙ্গে তাহাকে দেখিতে গেলাম। দেখিলাম নিতান্তই সে সাধারণ মানুষের মতো। এমন অবস্থায় দরোয়ান যখন তাহাকে মারিতে শুরু করিল, আমার মনে অত্যন্ত ব্যথা লাগিল। পদ্য সম্বন্ধেও আমার সেই দশা হইল। গোটাকয়েক শব্দ নিজের হাতে জোড়াতািড় দিতেই যখন তাহা পয়ার হইয়া উঠিল, তখন পদ্যরচনার মহিমা সম্বন্ধে মোহ আর টিকিল না। এখন দেখিতেছি, পদ্যবেচারার উপরেও মার সয় না। অনেকসময় দয়াও হয়। কিন্তু মারও ঠেকানাে যায় না, হাত নিসপিিস করে। চোরের পিঠেও এত লোকের এত বাড়ি পড়ে নাই। ভয় যখন একবার ভাঙিল। তখন আর ঠেকাইয়া রাখে কে। কোনো একটি কর্মচারীর কৃপায় একখানি নীলকাগজের খাতা জোগাড় করিলাম। তাহাতে স্বহস্তে পেনসিল দিয়া কতকগুলা অসমান লাইন কাটিয়া বড়ো বড়ো কঁচা অক্ষরে পদ্য লিখিতে শুরু করিয়া দিলাম। হরিণশিশুর নূতন শিং বাহির হইবার সময় সে যেমন যেখানে-সেখানে খুঁতা মারিয়া বেড়ায়, নূতন কাব্যোদগম লইয়া আমি সেইরকম উৎপাত আরম্ভ করিলাম। বিশেষত, আমার দাদা আমার এই সকল রচনায় গর্ব অনুভব করিয়া শ্ৰোতাসংগ্রহের উৎসাহে সংসারকে একেবারে অতিষ্ঠ করিয়া তুলিলেন। মনে আছে, একদিন একতলায় আমাদের জমিদারি-কাছারির আমলাদের কাছে কবিত্ব ঘোষণা করিয়া আমরা দুই ভাই বাহির হইয়া আসিতেছি, এমন সময় তখনকার ন্যাশনাল পেপার” পত্রের এডিটার শ্ৰীযুক্ত নবগোপাল মিত্ৰ সবেমাত্র আমাদের বাড়িতে পদার্পণ করিয়াছেন। তৎক্ষণাৎ দাদা তাহাকে গ্রেফতার করিয়া কহিলেন, “নবগোপালবাবু, রবি একটা কবিতা লিখিয়ছে, শুনুন না।” শুনাইতে বিলম্ব হইল না। কাব্য-গ্ৰন্থাবলীর বোঝা তখন ভারী হয় নাই। কবিকীর্তি কবির জামার পকেটে-পকেটেই তখন অনায়াসে ফেরে। নিজেই তখন লেখক, মুদ্রােকর, প্রকাশক, এই তিনে এক একে তিন হইয়া ছিলাম। কেবল বিজ্ঞাপন দিবার কাজে আমার দাদা আমার সহযোগী ছিলেন। পদ্মের উপরে একটা কবিতা লিখিয়ছিলাম, সেটা দেউড়ির সামনে । দাঁড়াইয়া উৎসাহিত উচ্চকণ্ঠে নবগোপালবাবুকে শুনাইয়া দিলাম। তিনি একটু হাসিয়া বলিলেন, “বেশ । হইয়াছে, কিন্তু ঐ দ্বিরেফ’ শব্দটার মানে কী।” “দ্বিরেফ’ এবং ভ্রমর দুটোই তিন অক্ষরের কথা। ভ্রমর শব্দটা ব্যবহার করিলে ছন্দের কোনো অনিষ্ট হইত না। ঐ দুরূহ কথাটা কোথা হইতে সংগ্ৰহ করিয়ছিলাম, মনে নাই। সমস্ত কবিতাটার মধ্যে ঐ শব্দটার উপরেই আমার আশা-ভরসা সবচেয়ে বেশি ছিল। দফতরখানার আমলমিহলে নিশ্চয়ই ঐ কথাটাতে বিশেষ ফল পাইয়াছিলাম। কিন্তু নবগোপালবাবুকে ইহাতেও লেশমাত্র দুর্বল করিতে পারিল না। এমনকি, তিনি ১ জ্যোতিঃপ্রকাশ গঙ্গোপাধ্যায় (vto) samo জ্যেষ্ঠা औी काशिनौ वैीव्र भूख GMINERIN F (ytre»-) » Me) -০ দেবেন্দ্রনাথের অর্ধনুকূল্য প্রকাশিত ( ১৮৬৬) স্বদেশীভাব-প্রচারক ইংরেজি সপ্তাহিক