পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী হাসিয়া উঠিলেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস হইল, নবগোপালবাবু সমজদার লোক নহেন। তঁহাকে আর-কখনো কবিতা শুনাই নাই। তাহার পরে আমার বয়স অনেক হইয়াছে, কিন্তু কে সমজদার, কে নয়, তাহা পরখ করিবার প্রণালীর বিশেষ পরিবর্তন হইয়াছে বলিয়া মনে হয় না। যাই হােক, নবগোপালবাবু হাসিলেন বটে কিন্তু “দ্বিরেফ’ শব্দটা মধুপানমত্ত ভ্রমরেরই মতো স্বস্থানে অবিচলিত রহিয়া গেল। তখন নর্মাল স্কুলের একটি শিক্ষক, শ্ৰীযুক্ত নীলকমল ঘোষাল মহাশয় বাড়িতে আমাদের পড়াইতেন। তাহার শরীর ক্ষীণ শুষ্ক ও কণ্ঠস্বর তীক্ষ ছিল। তঁহাকে মানুষজন্মধারী একটি ছিপছিপে বেতের মতো বােধ হইত। সকাল ছটা হইতে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত আমাদের শিক্ষাভার তঁহার উপর ছিল। চারুপাঠ, বস্তুবিচার,* প্রাণিবৃত্তান্ত হইতে আরম্ভ করিয়া মাইকেলের মেঘনাদবধকাব্য পর্যন্ত ইহার কাছে পড়া। আমাদিগকে বিচিত্র বিষয়ে শিক্ষা দিবার জন্য সেজদাদার” বিশেষ উৎসাহ ছিল। ইস্কুলে আমাদের যাহা পাঠ্য ছিল বাড়িতে তাহার চেয়ে অনেক বেশি পড়িতে হইত। ভোরে অন্ধকার থাকিতে উঠিয়া লংটি পরিয়া প্রথমেই এক কানা পালোয়ানের সঙ্গে কুস্তি করিতে হইত। তাহার পরে সেই মাটিমাখা শরীরের উপরে জামা পরিয়া পদার্থবিদ্যা, মেঘনাদবধকাব্য, জ্যামিতি, গণিত, ইতিহাস, ভূগোল শিখিতে হইত। স্কুল হইতে ফিরিয়া আসিলেই ড্রয়িং এবং জিমনাস্টিকের মাস্টার আমাদিগকে লইয়া পড়িতেন। সন্ধ্যার সময় ইংরেজি পড়াইবার জন্য অঘোরবাবু আসিতেন। এইরূপে রাত্ৰি নটার পর ছুটি পাইতাম । রবিবার সকালে বিষ্ণুর কাছে গান শিখিতে হইত। তা ছাড়া প্রায় মাঝে মাঝে সীতানাথ দত্ত মহাশয় আসিয়া যন্ত্রতন্ত্ৰযোগে প্রাকৃতবিজ্ঞান শিক্ষা দিতেন। এই শিক্ষাটি আমার কাছে বিশেষ ঔৎসুক্যজনক ছিল। জ্বাল দিবার সময় তাপসংযোগে পাত্রের নীচের জল পাতলা হইয়া উপরে উঠে, উপরের ভারী জল নীচে নামিতে থাকে, এবং এইজন্যই জল টগবগ করে- ইহাই যেদিন তিনি কাচপাত্রে জলে কাঠের গুড়া দিয়া আগুনে চড়াইয়া প্রত্যক্ষ দেখাইয়া দিলেন সেদিন মনের মধ্যে যে কিরূপ বিস্ময় অনুভব করিয়াছিলাম তাহা আজও স্পষ্ট মনে আছে। দুধের মধ্যে জল জিনিসটা যে একটা স্বতন্ত্র বস্তু, জ্বাল দিলে সেটা বাষ্প আকারে মুক্তিলাভ করে বলিয়াই দুধ গাঢ় হয়, এ কথাটাও যেদিন স্পষ্ট বুঝিলাম সেদিনও ভারি আনন্দ হইয়াছিল। যে-রবিবারে সকালে তিনি না আসিতেন, সে-রবিবার আমার কাছে রবিবার বলিয়াই মনে হইত না । ইহা ছাড়া, ক্যাম্বেল মেডিকেল স্কুলের একটি ছাত্রের কাছে কোনো-এক সময়ে অস্থিবিদ্যা শিখিতে আরম্ভ করিলাম। তার দিয়া জোড়া একটি নরকঙ্কাল কিনিয়া আনিয়া আমাদের ইস্কুলঘরে। লটকাইয়া দেওয়া হইল । . ইহারই মাঝে এক সময়ে হেরম্ব তত্ত্বরত্ন মহাশয় আমাদিগকে একেবারে ‘মুকুন্দং সচ্চিদানন্দং হইতে আরম্ভ করিয়া মুগ্ধবোধের সূত্র মুখস্থ করাইতে শুরু করিয়া দিলেন। অস্থিবিদ্যার হাড়ের নামগুলা এবং বোপদেবের সূত্র, দুয়ের মধ্যে জিত কাহার ছিল তাহা ঠিক করিয়া বলিতে পারি না। আমার বোধ হয় शफुथलिंड्ने छुि नन्नभ श्लिल । ১ অক্ষয়কুমার, দত্ত প্রণীত। বস্তুবিচার- ? ‘বাহ্য বস্তুর সহিত মানব প্রকৃতির সম্বন্ধ বিচার ২ সাতকড়ি দত্ত-প্ৰণীত ৩ হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৪৪-৮৪), দেবেন্দ্রনাথের তৃতীয় পুত্ৰ ৪"হীরা সিং নামক একজন শিখ পালোয়ান।” -প্রবাসী, মাঘ ১৩১৮, পৃ. ৩৮৮ ৫ বিষ্ণুচন্দ্র চক্রবর্তী (১৮১৯- ? ১৯০১) SDSS uBDDD BBD SSDLaSLArSSY DuBBS DB HESK LLGS BD BHSS KS DDDH S ৭ দ্ৰ কঙ্কাল, গল্পগুচ্ছ ১, রবীন্দ্র-রচনাবলী ১৬ (সুলভ ৮)