পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ՀԵ রবীন্দ্র-রচনাবলী জোড়ার্সকোর বাড়িতে আবার ফিরিলাম। আমার দিনগুলি নর্মল স্কুলের ই-করা মুখবিবরের মধ্যে তাহার প্রত্যহিক বরাদ্দ গ্রাসপিণ্ডের মতো প্রবেশ করিতে লাগিল। কাব্যরচনাচর্চা সেই নীল খাতাটি ক্রমেই বাকা বঁকা লাইনে ও সরু-মোেটা অক্ষরে কীটের বাসার মতো ভরিয়া উঠিতে চলিল। বালকের আগ্রহপূর্ণ চঞ্চল হাতের পীড়নে প্রথমে তাহা কুঞ্চিত হইয়া গেল। ক্রমে তাহার ধারগুলি ছিড়িয়া কতকগুলি আঙুলের মতো হইয়া ভিতরের লেখাগুলাকে যেন মুঠা করিয়া চাপিয়া রাখিয়া দিল। সেই নীল ফুলসক্যাপের খাতটি লইয়া করুণাময়ী বিলুপ্তদেবী কবে বৈতরণীর কোন ভাটার স্রোতে ভাসাইয়া দিয়াছেন জানি না। আহা, তাহার। ভবভয় আর নাই। মুদ্রাব্যন্ত্রের জঠরযন্ত্রণার হাত সে এড়াইল । আমি কবিতা লিখি, এ খবর যাহাতে রাটিয়া যায় নিশ্চয়ই সে-সম্বন্ধে আমার ঔদাসীন্য ছিল না। সাতকড়ি দত্ত মহাশয় যদিচ আমাদের ক্লাসের শিক্ষক ছিলেন না। তবু আমার প্রতি র্তাহার বিশেষ স্নেহ ছিল। তিনি প্ৰাণীবৃত্তান্ত নামে একখানা বই লিখিয়াছিলেন। আশা করি কোনাে সুদক্ষ পরিহাস্যরসিক ব্যক্তি সেই গ্রন্থলিখিত বিষয়ের প্রতি লক্ষ করিয়া তাহার স্নেহের কারণ নির্ণয় করবেন না। তিনি একদিন আমাকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি নাকি কবিতা লিখিয়া থাক।” লিখিয়া যে থাকি সে কথা গোপন করি নাই। ইহার পর হইতে তিনি আমাকে উৎসাহ দিবার জন্য মাঝে মাঝে দুই-এক পদ কবিতা দিয়া, তাহা পূরণ করিয়া আনিতে বলিতেন। তাহার মধ্যে একটি আমার মনে আছে— রবিকরে জ্বালাতন আছিল সবাই, বরষা ভরসা দিল আর ভয় নাই। আমি ইহার সঙ্গে যে পদ্য জুড়িয়াছিলাম তাহার কেবল দুটাে লাইন মনে আছে। আমার সেকালের কবিতাকে কোনোমতেই যে দুর্বোিধ বলা চলে না। তাঁহারই প্রমাণস্বরূপে লাইনদুটােকে এই সুযোগে এখানেই দলিলভুক্ত করিয়া রাখিলাম মীনগণহীন হয়েছিল সরোবরে, এখন তাহারা সুখে জলক্রীড়া করে। ইহার মধ্যে যেটুকু গভীরতা আছে তাহা সরোবরসংক্রান্ত— অত্যন্তই স্বচ্ছ। আর-একটি কোনো ব্যক্তিগত বর্ণনা হইতে চার লাইন উদ্ধৃত করি।--আশা করি, ইহার ভাষা ও ভাব অলংকারশাস্ত্ৰে প্ৰাঞ্জল বলিয়া গণ্য হইবে- “ আমসত্ত্ব দুধে ফেলি, তাহাতে কদলী দলি, সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতে— · হাপুস হুপূস শব্দ চারিদিক নিস্তব্ধ, পিপড়ার্কাদিয়া যায় পাতে। আমাদের ইস্কুলেরগোবিন্দবাবুই ঘনকৃষ্ণবর্ণ বেঁটেখাটাে মেটাসোটা মানুষ। ইনি ছিলেন সুপারিন্টেন্ডেন্ট। কালো চাপকন পরিয়া দোতলায় আপিসঘরে খাতাপত্ৰ লইয়া লেখাপড়া করিতেন । ইহাকে আমরা ভয় করিতাম। ইনিই ছিলেন বিদ্যালয়ের দণ্ডধারী বিচারক। একদিন অত্যাচারে পীড়িত হইয়া দ্রুতবেগে ইহার ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়াছিলাম। আসামি ছিল পাঁচ-ছয়জন বড়ো বড়ো ছেলে ; আমার পক্ষে সাক্ষী কেহই ১ হেড়মাস্টার (?) নর্মল স্কুল । ২ “খোড়া গোবিন্দ ময়রা”, দ্র। “ভালোমানুষ, গল্পসল্প