পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

08 রবীন্দ্ররচনাবলী দ্বারাবাতায়ন অসংকোচে উদঘাটিত করিয়া দিব । হে অনন্তশক্তি, আমাদের হিসােব তোমাদের হিসাব নছে- তুমি অক্ষমকে সক্ষম কয়, আচলকে সচল কর, অসম্ভবকে সম্ভব কর এবং মোহমুগ্ধকে যখন তুমি উদবোধিত কর তখন তাহার দৃষ্টির সম্মুখে তুমি যে কোন অমৃতলোকের তোরণ-স্থার উদঘাটিত করিয়া দাও। তাহা আমরা কল্পনাও করিতে পারি না- এই কথা নিশ্চয় জানিয়া আমরা যেন আনন্দে অমর হইয়া উঠি, এবং আমাদের যাহা কিছু আছে সমস্তই পণ করিয়া, ভূমীর পথে নিখিল মানবের বিজয়যাত্রায় যেন সম্পূর্ণ নিৰ্ভয়ে যোগদান করিতে পারি। জয় জয় জয় হে, জয়বিশ্বের, । মানবভাগ্যবিধাতা! እዩ9እbr ধর্মের অর্থ মানুষের উপর একটা মন্ত সমস্যার মীমাংসাভার পড়িয়ছে। তাহার একটা বড়োর দিক আছে, একটা ছোটাের দিক আছে। দুইয়ের মধ্যে একটা ছেদ আছে, অথচ যোগও আছে। এই ছেদটাকেও রাখিতে হইবে অথচ যোগটাকেও বাড়াইতে হইবে। ছোটাে থাকিয়াও তাঁহাকে বড়ো হইয়া উঠিতে হইবে। এই মীমাংসা করিতে গিয়া মানুষ নানারকম চেষ্টায় প্রবৃত্ত হইতেছে। কখনো সে ছোটােটাকে মায়া বলিয়া উড়াইয়া দিতে চায়, কখনো বড়োটাকে স্বল্প বলিয়া আমল দিতে চায় না। এই দুয়ের সামঞ্জস্য করিবার চেষ্টাই তাহার সকল চেষ্ট্রর মূল। এই সামঞ্জস্য যদি না করিতে পারা যায়। তবে ছোটােরও কোনো অর্থ থাকে না, বড়োটি নিরর্থক হইয়া পড়ে। প্ৰথমে ধরা যাক আমাদের এই শরীরটাকে । এটি একটি ছোটাে পদার্থ। ইহার বাহিরে একটি প্রকাণ্ড বড়ো পদার্থ আছে, সেটি এই বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ড । আমরা অন্যমনস্ক হইয়া এই শরীরটাকে একটা স্বতন্ত্র পদার্থ বলিয়া মনে করি। যেন এ শরীর আপনার মধ্যে আপনি সম্পূর্ণ। কিন্তু তেমন করিয়া বিচ্ছিন্ন করিয়া দেখিলে এ শরীরের কোনো অর্থই খুঁজিয়া পাই না। আপনাকে লইয়া এ শরীর করিবে কী ? থাকিৰে কোথায় ? আপনার মধ্যে এই শরীরের প্রয়োজন নাই সমাপ্তি নাই। বস্তুত আমাদের এই শরীরে যে স্বাতন্ত্র্যটুকু আছে, সে আপনাকে লইয়া। আপনি থাকিতে পারে না। বৃহৎ বিশ্বশরীরের সঙ্গে যে পরিমাণে তাহার মিল হয় সেই পরিমাণে তাহার অর্থ পাওয়া যায়। গর্ভের ভূণ যে নাক কানহাত পা লইয়া আছে গর্ভের বাহিরেই তাহার সার্থকতা। এইজন্য জন্মগ্রহণের পর হইতেই চোখের সঙ্গে আকাশব্যাপী আলোর, কানের সঙ্গে বাতাসব্যাপী শব্দের, হাত-পায়ের সঙ্গে চারি দিকের নানাবিধ বিষয়ের, সকলের চেয়ে যেটি ভালো যোগ সেইটি সাধন করিবার জন্য মানুষের কেবলই চেষ্টা চলিতেছে। এই বড়ো শরীরটির সঙ্গে পূর্ণভাবে মিলিবে ইহাই ছোটাে শরীরের একান্ত সাধনা- অথচ আপনার ভেদটুকু যদি না রাখে তাহা হইলে সে মিলনের কোনো অর্থই থাকে না । আমার চোখ আলো হইবে না, চোেখরূপে থাকিয়া আলো পাইবে, দেহ পৃথিবী হইবে না, দেহরূপে থাকিয়া পৃথিবীকে উপলব্ধি করিবে, ইহাই তাহার সমস্যা । বিরাট বিশ্বদেহের সঙ্গে আমাদের ছোটাে শরীরটি সকল দিক দিয়া এই যে আপনার যোগ অনুভব করিবার চেষ্টা করিতেছে। এ কি তাহার প্রয়োজনের চেষ্টা ? পাছে অন্ধকারে কোথাও খোচা লাগে এইজন্যই কি চােখ দেখিতে চেষ্টা করে ? পাছে বিপদের পদধ্বনি না জানিতে পারিয়া দুঃখ ঘটে এইজন্যই কি কান উৎসুক হইয়া অবশ্য প্রয়োজন আছে বটে কিন্তু প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জিনিস একটা আছে- প্রয়োজন তাহার অন্তর্ভূত। সেটা আর কিছু নহে, পূর্ণতার আনন্দ । চােখ আলোর মধ্যেই পূর্ণ হয়, কান শব্দের অনুভূতিতেই সার্থক হয়। যখন আমাদের শরীরে চোখ-কান ফোটেও নাই তখনো সেই পূর্ণতার নিগুঢ় ইচ্ছাই এই চোখ-কানকে বিকশিত করিবার জন্য অশ্রান্ত চেষ্টা করিয়াছে। মায়ের কোলে শুইয়া শুইয়া যে শিশু কথা