পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(ł68 দুঃখ যোগ্য। সে যে তত্ব বঙ্গে যোগ অন্য গে দিয়ে তেল দিয়া জানেন তিনি যেন VAR মানুষ বলে, জানি, আমরা পারি না- মহাপুরুষ বলেন, জানি, তোমরা পাের। মানুষ বলে, যাহা সাধ্য । এমন একটা ধর্ম খাড়া করো ; মহাপুরুষ বলেন, যাহা ধর্মাতাহা নিশ্চয়ই তোমাদের সাধ্য। মানুষের সমস্ত শক্তির উপরে তাহারা দাবি করেন- কেননা সমস্ত অশক্তির পরিচয়কে অতিক্ৰম করিয়াও তাহারা নিশ্চয়ই জানেন তাহার শক্তি আছে। অতএব ধর্মেই মানুষের শ্ৰেষ্ঠ পরিচয়। ধর্ম মানুষের উপরে যে পরিমাণে দাবি করে সেই অনুসারে মানুষ। আপনাকে চেনে। কোনাে লোক রাজার ছেলে হইয়াও হয়তো আপনাকে ভুলিয়া থাকিতে পারে। তবুও দেশের লোকের দিক হইতে একটা তাগিদ থাকা চাই। তাহার পৈতৃক গীেরব তাহাকে স্মরণ করাইতেই হইবে, তাহাকে লজা দিতে হইবে, এমনকি, তাহাকে দণ্ড দেওয়া আবশ্যক হইতে পারে। কিন্তু তাহাকে চাষা বলিয়া মিথ্যা ভুলইয়া সমস্যাকেদিব্য সহজ করিয়া দিলে চলিবে না ; সে চাষার মতাে প্রত্যহ ব্যবহার করিলেও সত্য তাহার সম্মুখে স্থির রাখিতে হইবে। তেমনি ধর্ম কেবলই মানুষকে বলিতেছে, তুমি অমৃতের পুত্র, ইহাই সত্য ; ব্যবহারত মানুষের স্বলন পদে পদে হইতেছে তবু ধর্মাতাহার সত্য পরিচয়কে উচ্চে ধরিয়া রাখিতেছে ; মানুষ বলিতে যে কতখানি বুঝায় ধর্ম তাহা কোনোমতেই মানুষকে ভুলিতে দিবে না ; ইহাই তাহার সর্বপ্রধান কাজ । ব্যাধি মানুষের শরীরের স্বভাব নহে তবু ব্যাধি মানুষকে ধরে। কিন্তু তখন মানুষের শরীরের প্রকৃতির ভিতরের দিক হইতে ব্যাধিকে তাড়াইবার নানাপ্রকার উপায় করিতে থাকে। যতক্ষণ মস্তিষ্ক ঠিক থাকে ততক্ষণ এই সংগ্রামে ভয় বেশি নাই। কিন্তু যখন মস্তিষ্ককেই ব্যাধিশত্রু পরাভূত করে তখনই ব্যাধি সকলের চেয়ে নিদারুণ হইয়া উঠে কারণ তখন বাহিরের দিক হইতে চিকিৎসকের চেষ্টা যতই প্রবল হউক ভিতরের দিকের শ্রেষ্ঠ সহায়টি দুর্বল হইয়া পড়ে। মস্তিষ্ক যেমন শরীরে, ধর্ম তেমনি মানবসমাজে। এই ধর্মের আদৰ্শই নিয়ত ভিতরে ভিতরে মানবপ্রকৃতিকে তাহার সমন্ত বিকৃতির সঙ্গে যুদ্ধে প্ৰবৃত্ত করিয়া রাখে। কিন্তু যে পরম দুদিনে এই ধর্মের আদর্শকেই বিকৃতি আক্রমণ করে সেদিন বাহিরের নিয়ম সংযম আচার অনুষ্ঠান পুলিস ও রাষ্ট্রবিধি যতই প্রবল হউক না কেন সমাজপ্রকৃতিকে দুৰ্গতি হইতে বীচাইয়া রাখিবে কে ? এইজন্য দুর্বলতার দোহাই দিয়া ইচ্ছাপূর্বক ধর্মকে দুর্বল করার মতো আত্মঘাতকতা আর কিছুই হইতে পারে না, কারণ দুর্বলতার দিনেই বঁচিবার একমাত্র উপায় ধর্মের বল । আমাদের দেশে সকলের চেয়ে নিদারুশ দুর্ভাগ্য এই যে, মানুষের দুর্বলতার মাপে ধর্মকে সুবিধামত খাটাে করিয়া ফেলা যাইতে পারে এই অদ্ভুত বিশ্বাস আমাদিগকে পাইয়া বসিয়াছে। আমরা এ কথা অসংকোচে * हाल बाद गतम शनि लगि ही ल ल माई भी आई ধর্মের প্রতি যদি শ্রদ্ধা থাকে। তবে এমন কথা কি বলা যায় ? প্রয়োজন অনুসারে আমরা তাহাকে ছোটাে বড়ো করিব । ধর্ম তো জীবনহীন জড় পদার্থ নহে; তাহার উপরে ফরমাশমত অনায়াসে দরজির কঁচি বা ছুতারের করাত তো চলে না। এ কথা তো কেহ বলে না যে, শিশুটি ক্ষুদ্র বলিয়া মাকেও চারিদিক হইতে কাটিয়া কম করিয়া ফেলো। মা তাে শিশুর গায়ের জামার সঙ্গে তুলনীয় নহেন। প্রথমত মাকে কাটিতে গেলেই মারিয়া ফেলা হইবে, দ্বিতীয়তা অখণ্ড সমগ্ৰ মাতাই বড়ো সন্তানের পক্ষে যেমন আবশ্যক ছোটাে : সন্তানটির পক্ষেও তেমনি আবশ্যক- তাহাকে কম করিলে বড়োও যেমন বঞ্চিত হইবে, ছোটােও তেমনি । বঞ্চিত হইবে। ধর্ম কি মানুষের মাতার মতোই নহে? আমি জানি আমাকে এই প্রশ্ন করা হইবে সকল মানুষেরই কি বুদ্ধি ও প্রকৃতি একই রকমের ? সকলেই কি ধর্মকে একই ভাবে বোঝে ? না, সকলের এক নহে; ছোটাে বড়ো উচুনিচু জগতে আছে। অতএব সত্যকে আমরা সকলেই সমান দূর পর্যন্ত পাইয়াছি এ কথা বলিতে পারি না। আমাদের শক্তি পরিমিত ; কিন্তু যতদূর বড়ো করিয়া সত্যকে পাইয়াহিতাহার চেয়েও সে ছোটাে এমিথ্যা কথা তো ক্ষণকালের জন্যও আমরা কাহারও খাতিরে বলিতে পারি না । গ্যালিলিও যে জ্যোতিকতত্ত্ব আবিষ্কার করিয়াছিলেন তাহা