পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

@心y বুজিয়া সীমাকে মানিতে চায় না বলিয়াই সে মানুষ। মানুষের এই যে কেবলই আরোর দিকে গতি, ভূমার দিকে টান, এইখানেই তাহার শ্রেয়। এই শ্রেয়কে রক্ষা করিবার, ইহাকে কেবলই স্মরণ করাইবার ভার তাহার ধর্মের প্রতি। এইজন্যই মানুষের চিত্ত তাহার কল্যাণকে যত সুদূর পর্যন্ত চিন্তা করিতে পারে তত সুদূরেই আপনার ধর্মকে প্রহরীর মতো বসাইয়া রাখিয়ছে- সেই মানবচেতনার একেবারে দিগন্তে দাড়াইয়া ধর্ম মানুষকে অনন্তের দিকে নিয়ত আহবান করিতেছে। মানুষের শক্তির মধ্যে দুটা দিক আছে, একটা দিকের নাম ‘পারে এবং আর-একটা দিকের নাম পরিবে । ‘পরের দিকটাই মানুষের সহজ, আর 'পরিবের দিকটাতেই তাহার তপস্যা। ধর্ম মানুষের এই ‘পরিবের সর্বোচ্চ শিখরে দাঁড়াইয়া তাহার সমন্ত পারেকে নিয়ত টান দিতেছে, তাহাকে বিশ্রাম করিতে । দিতেছে না, তাহাকে কোনো-একটা উপস্থিত সামান্য লাভের মধ্যে সস্তুষ্ট থাকিতে দিতেছে না। এইরূপে মানুষের সমস্ত পারে যখন সেই পরিবের দ্বারা অধিকৃত হইয়া সম্মুখের দিকে চলিতে থাকে তখনই মানুষ বীর- তখনই সে সত্যভাবে আত্মাকে লাভ করে। কিন্তু ‘পরিবের দিকে এই আকর্ষণ যাহারা সহিতে পারে না, যাহারা নিজেকে মূঢ় ও অক্ষম বলিয়া কল্পনা করে, তাহারা ধর্মকে বলে আমি যেখানে আছি সেইখানে তুমিও নামিয়া এসো। তাহার পরে ধর্মকে একবার সেইসহজসাধের সমতলক্ষেত্রেটানিয়া আনিতে পারিলে তখন তাহাকে বড়ো বড়ো পাথরচাপা দিয়া অত্যন্ত সনাতনভাবে জীবিত সমাধি দিয়াপ্পাখিতে চায় এবং মনে । করে ফাঁকি দিয়া ধর্মকে পাইলাম এবং তাঁহাকে একেবারে ঘরের দরজার কাছে চিরকালের মতো বাধিয়া রাখিয়া পুত্রপৌত্ৰাদিক্ৰমে ভোগ দখল করিতে থাকিলাম। তাহারা ধর্মকে বন্দী করিয়া নিজেরাই অচল হইয়া বসে, ধর্মকে দুর্বল করিয়া নিজেরা হীনবীৰ্য হইয়া পড়ে, এবং ধর্মকে প্রাণহীন করিয়া নিজেরা পলে পলে মরিতে থাকে ; তাহাদের সমাজ কেবলই বাহ্য আচারে অনুষ্ঠানে অন্ধসংস্কারে এবং কাল্পনিক বিভীষিকার কুজরাটিকায় দশ দিকে সমাচ্ছন্ন হইয়া পড়ে। বস্তুত ধর্ম যখন মানুষকে অসাধ্যসাধন করিতে বলে তখনই তাহা মানুষের শিরোধাৰ্য হইয় উঠে, আর যখনই সে মানুষের প্রবৃত্তির সঙ্গে কোনোমতে বন্ধুত্ব রাখিবার জন্য কানে কানে পরামর্শ দেয় যে তুমি যাহা পর তাঁহাই তোমার শ্রেয়, অথবা দশজনে যাহা করিয়া আসিতেছে তাহতেই নির্বিচারে যোগ দেওয়াই তােমার পূণ্য, ধর্ম তখন আমাদের প্রবৃত্তির চেয়েও নীচে নামিয়া যায়। প্রবৃত্তির সঙ্গে বােঝাপড়া করিতে এবং লোকাচারের সঙ্গে আপাস করিয়া গলাগলি করিতে আসিলেই ধর্ম আপনার উপরের জায়গাটি আর রাখিতে *ीत ना : ७कबालई उाशन उठि नई श्श | আমাদের দেশের বর্তমান সমাজে ইহার অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়। আমাদের সমাজে পুণ্যকে সস্তা নিজের নহে, বহুসহস্ৰ পূৰ্বপুরুষের সমস্ত পাপ ক্ষলিত হইয়া যায়। পাপ দূর করিবার এতবড়ো সহজ উপায়ের কথাটা বিশ্বাস করিতে অত্যন্ত লোভ হয় সন্দেহ নাই, সুতরাং মানুষ তাহার ধর্মশান্ত্রের এই কথায় আপনাকে কিছু পরিমাণে ভুলায় কিন্তু সম্পূৰ্ণ ভুলানো তাহার পক্ষেও অসাধ্য। একজন বিধবা রমণী একবার মধ্যরাত্রে চন্দ্রগ্রহণের পরে পীড়িত শরীর লইয়া যখন গঙ্গাস্নানে যাইতে উদ্যত হইয়াছিলেন আমি তাহাকে প্রশ্ন করিয়ছিলাম, “আপনি কি এ কথা সত্যই বিশ্বাস করিতে পারেন যে পাপ জিনিসটাকে ধূলামাটির মতো । জল দিয়া ধুইয়া ফেলা সম্ভব ? অথচ অকারণে আপনার শরীর-ধর্মের বিরুদ্ধে এই যে পাপ করিতে যাইতেছেন ইহার ফল কি আপনাকে পাইতে হইবে না ?” তিনি বলিলেন, “বাবা, এ তো সহজ কথা, তুমি যাহা বলিতেছ। তাহা বেশ বুঝি কিন্তু তবু ধর্মে যাহা বলে তাহা পালন না করিতে যে ভরসা পাই না।” এ কথার অর্থ এই যে, সেই রমণীর স্বাভাবিক বুদ্ধি তাহার ধর্মবিশ্বাসের উপরে উঠিয়া আছে। । আর-একটা দৃষ্টান্ত দেখো। একাদশীর দিনে বিধবাকে নির্জল উপবাস করিতে হইবে ইহা আমাদের দেশে লোকচারসম্মত অথবা শাস্ত্রানুগত ধর্মানুশাসন। ইহার মধ্যে যে নিদারুশ নিষ্ঠুরতা আছে স্বভাবত আমাদের প্রকৃতিতে তাহা বৰ্তমান নাই। এ কথা কখনোই সত্য নহে শ্ৰীলোককে ক্ষুধাপিপাসায় পীড়িত করিতে আমরা সহজে দুঃখ পাই না। তবে কেন হতভাগিনীদিগকে আমরা ইচ্ছা করিয়া দুঃখ দিই এ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিলে আর-কোনো যুক্তিসংগত উত্তর ধুজিয়া পাই না, কেবল এই কথাই বলিতে হয় আমাদের ধর্মে বলে