পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৩০ ৷ ਗੈਰਸਰੀ idea, si fre characteristics, SR-f(v. suggestion, NR VICTVS VICR এখানে ভােব বলিতে বুঝাইতেছে অন্তরের রূপ। আমার একটা ভােব তোমার একটা ভাব ; সেইভাবে আমি আমার মতো, তুমি তোমার মতো। রূপের ভেদ যেমন বাহিরের ভেদ, ভাবের ভেদ তেমনি অন্তরের (sgwr | রূপের ভেদ সম্বন্ধে যে কথা বলা হইয়াছে ভাবের ভেদ সম্বন্ধেও সেই কথাই খাটে। অর্থাৎ কেবল যদি তাহা এক-রোখা হইয়া ভেদকেই প্রকাশ করিতে থাকে। তবে তাহা বীভৎস হইয়া উঠে। তাহা লইয়া সৃষ্টি হয় না, প্ৰলয়ই হয়। ভােব যখন আপনি সত্য ওজন মানে অর্থাৎ আপনার চারি দিককে মানে, বিশ্বকে মনে, তখনই তাহা মধুর। রাপের ওজন যেমন তাহার প্রমাণ, ভাবের ওজন তেমনি তাহার লাবণ্য। কেহ যেন না মনে করেন ভােব কথাটা কেবল মানুষের সম্বন্ধেই খাটে। মানুষের মন অচেতন পদার্থের মধ্যেও একটা অন্তরের পদার্থ দেখে। সেই পদার্থটা সেই অচেতনের মধ্যে বস্তুতই আছে কিংবা আমাদের মন সেটাকে সেইখানে আরোপ করে সে হইল তত্ত্বশান্ত্রের তর্ক, আমার তাঁহাতে প্রয়োজন নাই। এইটুকু মানিলেই হইল স্বভাবতই মানুষের মন সকল জিনিসকেই মনের জিনিস করিয়া লইতে চায়। তাই আমরা যখন একটা ছবি দেখি তখন এই প্রশ্ন করি এই ছবির ভাবটা কী? অর্থাৎ ইহাতে তো হাতের কাজের নৈপুণ্য দেখিলাম, চােখে দেখার বৈচিত্র্য দেখিলাম, কিন্তু ইহার মধ্যে চিত্তের কোন রূপ দেখা যাইতেছে- ইহার ভিতর হইতে মন মনের কাছে কোন লিপি পাঠাইতেছে ? দেখিলাম একটা গাছ- কিন্তু গাছ তো ঢের দেখিয়াছি, এ গাছের অন্তরের কথাটা কী, অথবা যে আঁকিল গাছের মধ্য দিয়া তার অন্তরের কথাটা কী সেটা যদি না পাইলাম। তবে গাছ আঁকিয়া লাভ কিসের ? অবশ্য উদ্ভিদতত্ত্বের বইয়ে যদি গাছের নমুনা দিতে হয় তবে সে আলাদা কথা। কেননা সেখানে সেটা চিত্র নয় সেটা দৃষ্টান্ত । শুধু রূপ শুধু ভাব কেবল আমাদের গোচর হয় মাত্র। “আমাকে দেখো “আমাকে জানো তাহদের দাবি এই পর্যন্ত। কিন্তু ‘আমাকে রাখাে' এ দাবি করিতে হইলে আরো কিছু চাই। মনের আম-দরবারে আপনি-আপিন রূপ লইয়া ভাব লইয়া নানা জিনিস হাজির হয়, মন তাহাদের কাহাকেও বলে, “বােসাে, কাহাকেও বলে, “আচ্ছা যাও।” * যাহারা আর্টিস্ট তাঁহাদের লক্ষ্য এই যে, তাহাদের সৃষ্ট পদার্থ মনের দরবারে নিত্য আসন পাইবে। যে-সব গুণীর সৃষ্টিতে রূপ আপনার প্রমাণে, ভােব আপনার লাবণ্য, প্রতিষ্ঠিত হইয়া আসিয়াছে তাহারাই ক্লাসিক হইয়াছে, তাহারাই নিত্য হইয়াছে। অতএব চিত্রকলায় ওস্তাদের ওস্তাদি, রূপে ও ভাবে তেমন নয়, যেমন প্রমাণে ও লবণ্যে । এই সত্য-ওজনের আন্দাজটি পুঁথিগত বিদ্যায় পাইবার জো নাই। ইহাতে স্বাভাবিক প্রতিভার দরকার। দৈহিক ওজনবােধটি স্বাভাবিক হইয়া উঠিলে তবেই চলা সহজ হয়। তবেই নূতন নূতন বাধায়, পথের নূতন নূতন আঁকেবাকে আমরা দেহের গতিটাকে অনায়াসে বাহিরের অবস্থার সঙ্গে তানে লয়ে মিলাইয়া চলিতে পারি। এই ওজনবােধ একেবারে ভিতরের জিনিস যদি না হয় তবে রেলগাড়ির মতো একই বাধা রাস্তায় কলের টানে চলিতে হয়, এক ইঞ্চি ডাইনে বায়ে হেলিলেই সর্বনাশ । তেমনি রূপ ও ভাবের সম্বন্ধে যার ওজনবোধ অন্তরের জিনিস সে নব-নবােন্মেষশালিনী বুদ্ধির পথে কলাসৃষ্টিকে চালাইতে পারে। যার সে বোধ নাই সে ভয়ে ভয়ে একই বাধা রাস্তায় ঠিক এক লাইনে চলিয়া পোটাে হইয়া কারিগর হইয় ওঠে, সে সীমার সঙ্গে সীমাের নূতন সম্বন্ধ জমাইতে পারে না। এইজন্য নূতন সম্বন্ধমাত্রকে সে বাঘের মতো দেখে । যাহা হউক, এতক্ষণ ছবির যড়ঙ্গের আমরা দুটি অঙ্গ দেখিলাম, বহিরঙ্গ ও অন্তরঙ্গ। এইবার পঞ্চম অঙ্গে বাহির ও ভিতর যে-কোঠায় এক হইয়া মিলিয়াছে তাহার কথা আলোচনা করা যাক। সেটার নাম সাদৃশ্যং" | নকল করিয়া যে সাদৃশ্য মেলে এতক্ষণে সেই কথাটা আসিয়া পড়িল এমন যদি কেহ মনে করেন তবে শাস্ত্ৰবাক্য র্তাহার পক্ষে বৃথা হইল। ঘোড়াগোরুকে ঘোড়াগোরু করিয়া আঁকিবার জন্য রেখা প্রমাণ ভােব লাবণ্যের এতবড়ো উদযোগপর্ব কেন ? তাহা হইলে এমন কথাও কেহ মনে করিতে পারেন উত্তর-গোগুহে গােরু চুরি কাণ্ডের জন্যই উদযোগ পর্ব কুরুক্ষেত্রযুদ্ধের জন্য নহে। ] সাদৃশ্যের দুইটা দিক আছে; একটা, রূপের সঙ্গে রূপের সাদৃশ্য ; আর-একটা ভাবের সঙ্গে রূপের