পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S)Q8 রবীন্দ্র-রচনাবলী ছোট্ট ঘাসের দিকে হাত বাঁড়িয়ে বলছি, আমি তপ্ত, আমি রিক্ত, আমি ক্লান্ত । তৃষ্ণার দাহে এই মরুট কত উর্বর ভূমিকে লেহন করে নিয়েছে, তাতে মরুর পরিসরই বাড়ছে, ওই একটুখানি দুর্বল ঘাসের মধ্যে যে-প্রাণ আছে তাকে আপন করতে পারছে না। নন্দিনী। তুমি যে এত ক্লাস্ত তোমাকে দেখে তো তা মনেই হয় না। আমি তো তোমার মস্ত জোরটাই দেখতে পাচ্ছি। d নেপথ্যে । নন্দিন, একদিন দূরদেশে আমারই মতো একটা ক্লান্ত পাহাড় দেখেছিলুম। বাইরে থেকে বুঝতেই পারি নি তার সমস্ত পাথর ভিতরে ভিতরে ব্যথিয়ে উঠেছে। একদিন গভীর রাতে ভীষণ শব্দ শুনলুম, যেন কোন দৈত্যের দুঃস্বপ্ন গুমরে গুমরে হঠাৎ ভেঙে গেল। সকালে দেখি পাহাড়টা ভূমিকম্পের টানে মাটির নিচে তলিয়ে গেছে। শক্তির ভার নিজের অগোচরে কেমন ক’রে নিজেকে পিষে ফেলে, সেই পাহাড়টাকে দেখে তাই বুঝেছিলুম। আর, তোমার মধ্যে একটা জিনিস দেখছি —সে এর উলটো । নন্দিনী । আমার মধ্যে কী দেখছ। নেপথ্যে । বিশ্বের বঁাশিতে নাচের যে-ছন্দ বাজে সেই ছন্দ। নন্দিনী । বুঝতে পারলুম না। নেপথ্যে । সেই ছন্দে বস্তুর বিপুল ভার হালকা হয়ে যায়। সেই ছন্দে গ্রহনক্ষত্রের দল ভিখারী নটবালকের মতো আকাশে আকাশে নেচে বেড়াচ্ছে । সেই নাচের ছন্দেই নন্দিনী, তুমি এমন সহজ হয়েছ, এমন সুন্দর। আমার তুলনায় তুমি কতটুকু, তৰু তোমাকে ঈর্ষা করি। নন্দিনী । তুমি নিজেকে সবার থেকে হরণ করে রেখে বঞ্চিত করেছ ; সহজ হয়ে ধরা দাও না কেন । নেপথ্যে। নিজেকে গুপ্ত রেখে বিশ্বের বড়ো বড়ো মালথানার মোটা মোটা জিনিস চুরি করতে বসেছি। কিন্তু যে-দান বিধাতার হাতের মুঠির মধ্যে ঢাকা, সেখানে তোমার চাপার কলির মতো আঙুলটি যতটুকু পৌঁছয়, আমার সমস্ত দেহের জোর তার কাছ দিয়ে যায় না। বিধাতার সেই বদ্ধ মুঠে আমাকে খুলতেই হবে। নন্দিনী । তোমার এ-সব কথা আমি ভালো বুঝতে পরি নে, আমি যাই । নেপথ্যে । আচ্ছা যেয়ে,— কিন্তু জানলার বাইরে এই হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি, তোমার হাতখানি একবার এর উপর রাখে। নন্দিনী । না না, তোমার সবখানা বাদ দিয়ে হঠাৎ একখানা হাত বেরিয়ে এলে আমার ভয় করে।