পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७१२ রবীন্দ্র-রচনাবলী নেপথ্যে । তা হলে বলে দিচ্ছি, ও অামারো শনিগ্রহ তারো শনিগ্ৰহ । নন্দিনী। ছিছি, ওকি কথা বলছ । আমি যাই । নেপথ্যে । কোথায় যাবে । নন্দিনী । তোমার দুর্গদুয়ারের কাছে বসে থাকব। নেপথ্যে । কেন । নন্দিনী । রঞ্জন যখন সেই পথ দিয়ে আসবে, দেখতে পাবে আমি তারি জন্যে অপেক্ষা করে আছি । নেপথ্যে। রঞ্জনকে যদি দলে ধুলোর সঙ্গে মিলিয়ে দিই, আর তাকে একটুও চেনা না যায় । নন্দিনী । আজ তোমার কী হয়েছে। অামাকে মিছিমিছি ভয় দেখাচ্ছে কেন । নেপথ্যে। মিছিমিছি ভয় ? জান না, আমি ভয়ংকর ? নন্দিনী । হঠাৎ তোমার একি ভাব । লোকে তোমাকে ভয় করে, এইটেই দেখতে ভালোবাস ? আমাদের গায়ের শ্রীকণ্ঠ যাত্রায় রাক্ষস সাজে— সে যখন আসরে নামে তখন ছেলেরা আঁতকে উঠলে সে ভারি খুশী হয়। তোমারো-যে সেই দশা । আমার কী মনে হয় সত্যি বলব ? রাগ করবে না ? নেপথ্যে। কী বলে দেখি । নন্দিনী । ভয় দেখাবার ব্যবসা এখানকার মানুষের। তোমাকে তাই তারা জাল দিয়ে ঘিরে অদ্ভুত সাজিয়ে রেখেছে। এই জুজুর পুতুল সেজে থাকতে লজ্জা করে না ? নেপথ্যে । কী বলছ, নন্দিনী । নন্দিনী । এতদিন যাদের ভয় দেখিয়ে এসেছ তারা ভয় পেতে একদিন লজ্জা করবে। আমার রঞ্জন এখানে যদি থাকত, তোমার মুখের উপর তুড়ি মেরে সে মরত তবু ভয় পেত না । নেপথ্যে । তোমার স্পর্ধ তো কম নয়। এতদিন যা-কিছু ভেঙে চুরমার করেছি তারি রাশকরা পাহাড়ের চুড়ার উপরে তোমাকে দাড় করিয়ে দেখাতে ইচ্ছে করছে। তার পরে— নন্দিনী। তার পরে কী । নেপথ্যে । তার পরে আমার শেষ ভাঙাটা ভেঙে ফেলি। দাড়িমের দান৷ ফাটিয়ে দশ আঙুলের ফাকে ফঁাকে যেমন তার রস বের করে, তেমনি তোমাকে আমার এই দুটো হাতে— যাও যাও, এখনি পালিয়ে যাও, এখনি।