পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ 않o 이 এমন কি, বউয়ের খাওয়াপরারও ষত্ব হয় না। যদি কোনো দয়াপরতন্ত্র প্রতিবেশিনী কোনো ক্রটির উল্লেখ করে, শাশুড়ী বলে, “ওই ঢের হয়েছে।” অর্থাৎ বাপ যদি পুরা দাম দিত তো মেয়ে পুরা যত্ন পাইত। সকলেই এমন ভাব দেখায় যেন বধুর এখানে কোনো অধিকার নাই, ফাকি দিয়া প্রবেশ করিয়াছে। বোধ হয় কন্যার এই-সকল অনাদর এবং অপমানের কথা বাপের কানে গিয়া থাকিবে । তাই রামসুন্দর অবশেষে বসতবাড়ি বিক্রয়ের চেষ্টা করিতে লাগিলেন । কিন্তু ছেলেদের যে গৃহহীন করিতে বসিয়াছেন সে-কথা তাহাদের নিকট হইতে গোপনে রাখিলেন। স্থির করিয়াছিলেন, বাড়ি বিক্রয় করিয়া সেই বাড়িই ভাড়া লইয়। বাস করিবেন ; এমন কৌশলে চলিবেন যে, তাহার মৃত্যুর পুর্বে এ-কথা ছেলেরা জানিতে পারিবে না । কিন্তু ছেলেরা জানিতে পারিল। সকলে আসিয়া কাদিয়া পড়িল । বিশেষত বড়ো তিনটি ছেলে বিবাহিত এবং তাহীদের কাহারো বা সন্তান আছে । তাহাদের আপত্তি অত্যন্ত গুরুতর হইয়া দাড়াইল, বাড়িবিক্রয় স্থগিত হইল। তখন রামসুন্দর নানাস্থান হইতে বিস্তর স্বদে অল্প অল্প করিয়া টাকা ধার করিতে লাগিলেন । এমন হইল যে, সংসারের খরচ আর চলে না । নিরু বাপের মুখ দেখিয়া সব বুঝিতে পারিল । বৃদ্ধের পঙ্ককেশে শুকমুখে এবং সদাসংকুচিত ভাবে দৈন্য এবং দুশ্চিন্তা প্রকাশ হইয়া পড়িল । মেয়ের কাছে যখন বাপ অপরাধী তখন সে অপরাধের অনুতাপ কি আর গোপন রাখা যায়। রামস্বন্দর যখন বেহাইবাড়ির অনুমতিক্রমে ক্ষণকালের জন্য কন্যার সাক্ষণতলাভ করিতেন, তখন বাপের বুক যে কেমন করিয়া ফাটে, তাহা তাহার হাসি দেখিলেই টের পাওয়া যাইত। সেই ব্যথিত পিতৃহৃদয়কে সাস্তুনা দিবার উদ্দেশে দিনকতক বাপের বাড়ি যাইবার জন্য নিরু নিতান্ত অধীর হইয়া উঠিয়াছে। বাপের মান মুখ দেখিয়া সে আর দূরে থাকিতে পারে না । একদিন রামসুন্দরকে কহিল, “বাবা, আমাকে একবার বাড়ি লইয়া যাও।” রামসুন্দর বলিলেন, “আচ্ছা ।” কিন্তু তাহার কোনো জোর নাই— নিজের কন্যার উপরে পিতার যে স্বাভাবিক অধিকার আছে, তাহা যেন পণের টাকার পরিবর্তে বন্ধক রাখিতে হইয়াছে। এমন কি কন্যার দর্শন, সেও অতি সসংকোচে ভিক্ষা চাহিতে হয় এবং সময়বিশেষে নিরাশ হইলে দ্বিতীয় কথাটি কহিবার মুখ থাকে না। কিন্তু মেয়ে আপনি বাড়ি আসিতে চাহিলে বাপ তাকে না আনিয়া কেমন করিয়া থাকে। তাই, বেহাইয়ের নিকট সে-সম্বন্ধে দরখাস্ত পেশ করিবার পূর্বে রামন্বন্দর কত