পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী مbہ 8 হীনতা, কত অপমান, কত ক্ষতি স্বীকার করিয়া যে তিনটি হাজার টাকা সংগ্ৰহ করিয়াছিলেন, সে-ইতিহাস গোপন থাকাই ভালো । নোটক’খানি রুমালে জড়াইয়া চাদরে বাধিয়া রামসুন্দর বেহাইয়ের নিকট গিয়া বসিলেন। প্রথমে হাস্যমুখে পাড়ার খবর পাড়িলেন। হরেকৃষ্ণের বাড়িতে একটা মস্ত চুরি হইয়া গিয়াছে, তাহার আদ্যোপাস্ত বিবরণ বলিলেন । নবীনমাধব ও রাধামাধব দুই ভাইয়ের তুলনা করিয়া বিদ্যাবুদ্ধি ও স্বভাব সম্বন্ধে রাধামাধবের স্বখ্যাতি এবং নবীনমাধবের নিন্দ করিলেন ; শহরে একটা নূতন ব্যামো আসিয়াছে, সে-সম্বন্ধে অনেক আজগুবি আলোচনা করিলেন ; অবশেষে হু কাটি নামাইয়। রাখিয়া কথায় কথায় বলিলেন, “হা হা, বেহাই সেই টাকাটা বাকি আছে বটে। রোজই মনে করি, যাচ্ছি অমনি হাতে করে কিছু নিয়ে যাই কিন্তু সময়কালে মনে থাকে না। আর ভাই, বুড়ো হয়ে পড়েছি।” এমনি এক দীর্ঘ ভূমিকা করিয়া পঞ্জরের তিনখানি অস্থির মতে সেই তিনখানি নোট যেন অতি সহজে অতি অবহেলে বাহির করিলেন। সবেমাত্র তিন হাজার টাকার নোট দেখিয়া রায়বাহাদুর অট্টহাস্য করিয়া উঠিলেন। বলিলেন, “থাক্ বেহাই, ওতে আমার কাজ নেই।” একটা প্রচলিত বাংলা প্রবাদের উল্লেখ করিয়া বলিলেন, সামান্ত কারণে হাতে দুর্গন্ধ করিতে তিনি চান না। এই ঘটনার পরে মেয়েকে বাড়ি আনিবার প্রস্তাব কাহারে মুখে আসে না— কেবল রামসুন্দর ভাবিলেন, ‘সে-সকল কুটুম্বিতার সংকোচ আমাকে আর শোভা পায় না। মর্যাহতভাবে অনেকক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া অবশেষে মৃদুস্বরে কথাটা পাড়িলেন। রায়বাহাদুর কোনো কারণমাত্র উল্লেখ না করিয়া বলিলেন, “সে এখন হচ্ছে না।” এই বলিয়া কর্মোপলক্ষে স্থানান্তরে চলিয়া গেলেন । রামসুন্দর মেয়ের কাছে মুখ না দেখাইয়া কম্পিতহস্তে কয়েকখানি নোট চাদরের প্রান্তে বাধিয়া বাড়ি ফিরিয়া গেলেন । মনে-মনে প্রতিজ্ঞা করিলেন, যতদিন না সমস্ত টাকা শোধ করিয়া দিয়া অসংকোচে কন্যার উপরে দাবি করিতে পরিবেন, ততদিন আর বেহাইবাড়ি যাইবেন না। 嗜 বহুদিন গেল। নিরুপমা লোকের উপর লোক পাঠায় কিন্তু বাপের দেখা পায় না। অবশেষে অভিমান করিয়া লোক পাঠানো বন্ধ করিল— তখন রামসুন্দরের মনে বড়ো আঘাত লাগিল, কিন্তু তৰু গেলেন না । আশ্বিন মাস আসিল । রামসুন্দর বলিলেন, ‘এবার পুজার সময় মাকে ঘরে আনিবই, নহিলে আমি’— খুব একটা শক্ত রকম শপথ করিলেন। چ পঞ্চমী কি ষষ্ঠীর দিনে আবার চাদরের প্রাস্তে গুটিকতক নোট বাধিয়া রামস্বন্দর