পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ 8 రిఫ్ যাত্রার উদ্যোগ করিলেন। পাচ বৎসরের এক নাতি আসিয়া বলিল, “দাদা, আমার জন্যে গাড়ি কিনতে যাচ্ছিস ?” বহুদিন হইতে তাহার ঠেলাগাড়িতে চড়িয়া হাওয়া খাইবার শখ হইয়াছে, কিন্তু কিছুতেই তাহা মিটিবার উপায় হইতেছে না। ছয় বৎসরের এক নাতিনী আসিয়া সরোদনে কহিল, পুজার নিমন্ত্রণে যাইবার মতো তাহার একখানিও ভালো কাপড় নাই । - রামসুন্দর তাহ জানিতেন, এবং সে-সম্বন্ধে তামাক খাইতে খাইতে বৃদ্ধ অনেক চিস্তা করিয়াছেন। রায়বাহাদুরের বাড়ি যখন পুজার নিমন্ত্রণ হইবে তখন র্তাহার বধূগণকে অতি যৎসামান্য অলংকারে অনুগ্রহপাত্র দরিদ্রের মতে যাইতে হইবে, এ-কথা স্মরণ করিয়া তিনি অনেক দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়াছেন ; কিন্তু তাহাতে র্তাহার ললাটের বাধক্যরেখা গভীরতর অঙ্কিত হওয়া ছাড়া আর-কোনো ফল হয় নাই । দৈন্যপীড়িত গৃহের ক্ৰন্দনধ্বনি কানে লইয়া বৃদ্ধ তাহার বেহাইবাড়িতে প্রবেশ করিলেন। আজ র্তাহার সে সংকোচভাব নাই ; দ্বাররক্ষী এবং ভৃত্যদের মুখের প্রতি সে চকিত সলজ্জ দৃষ্টিপাত দূর হইয়া গিয়াছে, যেন আপনার গৃহে প্রবেশ করিলেন। শুনিলেন, রায়বাহাদুর ঘরে নাই, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করিতে হইবে। মনের উচ্ছ্বাস সংবরণ করিতে না পারিয়া রামসুন্দর কন্যার সহিত সাক্ষাৎ করিলেন । আনন্দে দুই চোখ দিয়া জল পড়িতে লাগিল। বাপও কাদে মেয়েও কাদে ; দুইজনে কেহ আর কথা কহিতে পারে না। এমন করিয়া কিছুক্ষণ গেল। তারপরে রামসুন্দর কহিলেন, "এবার তোকে নিয়ে যাচ্ছি, মা। আর কোনো গোল নাই ।” এমন সময়ে রামসুন্দরের জ্যেষ্ঠপুত্র হরমোহন তার দুটি ছোটো ছেলে সঙ্গে লইয়৷ সহসা ঘরে প্রবেশ করিলেন । পিতাকে বলিলেন, “বাবা, আমাদের তবে এবার পথে ভাসালে ?” 响 রামসুন্দর সহসা অগ্নিমূর্তি হইয়া বলিলেন, “তোদের জন্য কি আমি নরকগামী হব। আমাকে তোরা আমার সত্য পালন করতে দিবি নে ?” রামসুন্দর বাড়ি বিক্রয় করিয়া বসিয়া আছেন ; ছেলেরা কিছুতে না জানিতে পায়, তাহার অনেক ব্যবস্থা করিয়াছিলেন, কিন্তু তবু তাহারা জানিয়াছে দেখিয়া তাহাদের প্রতি হঠাৎ অত্যন্ত রুষ্ট ও বিরক্ত হইয়া উঠিলেন । তাহার নাতি তাহার দুই হাটু সবলে জড়াইয়া ধরিয়া মুখ তুলিয়া কহিল, "দাদা, আমাকে গাড়ি কিনে দিলে না ?” নতশির রামসুন্দরের কাছে বালক কোনো উত্তর না পাইয়া নিরুর কাছে গিয়৷ বলিল, “পিসিমা, আমাকে একখানা গাড়ি কিনে দেবে ?”