পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ 8Oම් বিবাহ দিতে হইবে, এবং সেজন্য বিস্তর অর্থের প্রয়োজন। গৃহিণী অত্যন্ত নিশ্চিন্তমুখে বলিলেন, “তুমি যদি একবার একটুখানি মন দাও, তাহা হইলে ভাবনা কিছুই নাই ।” তারাপ্রসন্ন কিঞ্চিৎ ব্যগ্রভাবে বলিলেন, “সত্য নাকি । আচ্ছা, বলে দেখি কী করিতে হইবে।” দীক্ষায়ণী সংশয়শূন্য নিরুদ্বিগ্নভাবে বলিলেন, “কলিকাতায় চলে, তোমার বইগুলা ছাপাও, পাচজন লোকে তোমাকে জামুক,— তার পরে দেখো দেখি, টাকা আপনি আসে কিনা।” স্ত্রীর আশ্বাসে তারাপ্রসন্নও ক্রমে আশ্বাস লাভ করিতে লাগিলেন এবং মনে প্রত্যয় হইল, তিনি ইস্তক-নাগাদ বসিয়া বসিয়া যত লিখিয়াছেন তাহাতে পাড়ামৃদ্ধ লোকের কন্যাদায় মোচন হইয়া যায়। এখন, কলিকাতায় যাইবার সময় ভারি গোল পড়িয়া গেল । দীক্ষায়ণী তাহার নিরুপায় নিঃসহায় সযত্নপালিত স্বামীটিকে কিছুতেই একলা ছাড়িয়া দিতে পারেন না। র্তাহাকে খাওয়াইয়া পরাইয়া নিত্যনৈমিত্তিক কর্তব্য স্মরণ করাইয়া সংসারের বিবিধ উপদ্রব হইতে কে রক্ষা করিবে । কিন্তু অনভিজ্ঞ স্বামীও অপরিচিত বিদেশে স্ত্রীকন্যা সঙ্গে করিয়া লইয়া যাইতে অত্যন্ত ভীত ও অসম্মত। অবশেষে দাক্ষায়ণী পাড়ার একটি চতুর লোককে স্বামীর নিত্য-অভ্যাস সম্বন্ধে সহস্র উপদেশ দিয়া আপনার পদে নিযুক্ত করিয়া দিলেন। এবং স্বামীকে অনেক মাথার দিব্য ও অনেক মাদুলিতাগায় আচ্ছন্ন করিয়া বিদেশে রওনা করিয়া দিলেন । এবং ঘরে আছাড় খাইয়া কাদিতে লাগিলেন । কলিকাতায় আসিয়া তারাপ্রসন্ন তাহার চতুর সঙ্গীর সাহায্যে ‘বেদাস্তপ্রভাকর প্রকাশ করিলেন। দীক্ষায়ণীর গহনা বন্ধক রাখিয়া যে-টাকাক’টি পাইয়াছিলেন, তাহার অধিকাংশই খরচ হইয়া গেল । বিক্রয়ের জন্য বহির দোকানে এবং সমালোচনার জন্য দেশের ছোটো বড়ো সমস্ত সম্পাদকের নিকট 'বেদাস্তপ্রভাকর পাঠাইয়া দিলেন । ডাকযোগে গৃহিণীকেও একখানা বই রেজেস্টারি করিয়া পাঠাইলেন। আশঙ্কা ছিল, পাছে ডাকওয়ালার পথের মধ্য হইতে চুরি করিয়া লয়। 鲇 গৃহিণী যেদিন ছাপার বইয়ের উপরের পৃষ্ঠায় ছাপার অক্ষরে তাহার স্বামীর নাম দেখিলেন, সেদিন পাড়ার সকল মেয়েকে নিমন্ত্ৰণ করিয়া খাওয়াইলেন। যেখানে সকলে আসিয়া বসিবার কথা, সেইখানে বইটা ফেলিয়া রাখিলেন।