পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ 81లి(t এইরূপ অজস্র স্তুতিবাক্যে তারাপ্রসন্ন যখন অতিমাত্র উৎফুল্ল হইয়া উঠিয়াছেন, এমন সময়ে পত্র পাইলেন দাক্ষায়ণীর পঞ্চম সন্তানসম্ভাবনা অতি নিকটবর্তী হইয়াছে। তখন রক্ষকটিকে সঙ্গে করিয়া অর্থসংগ্রহের জন্য দোকানে গিয়া উপস্থিত হইলেন । সকল দোকানদার একবাক্যে বলিল, একখানি বইও বিক্রয় হয় নাই। কেবল এক জায়গায় শুনিলেন, মফঃস্বর হইতে কে-একজন তাহার এক বই চাহিয়া পাঠাইয়াছিল এবং তাহাকে ভ্যালুপেবেলে পাঠানোও হইয়াছিল, কিন্তু বই ফেরত আসিয়াছে, কেহ গ্রহণ করে নাই। দোকানদারকে তাহার মাস্থল দণ্ড দিতে হইয়াছে, সেইজন্য সে বিষম আক্রোশে গ্রন্থকারের সমস্ত বহি তখনি তাহাকে প্রত্যপণ করিতে উদ্যত হইল । গ্রন্থকার বাসায় ফিরিয়া আসিয়া অনেক ভাবিলেন কিন্তু কিছুই বুঝিয়া উঠিতে পারিলেন না। র্তাহার চিন্তাশীল গ্রন্থ সম্বন্ধে যতই চিন্তা করিলেন, ততই অধিকতর উদ্বিগ্ন হইয়া উঠিতে লাগিলেন। অবশেষে যে-কয়েকটি টাকা অবশিষ্ট ছিল, তাহাই অবলম্বন করিয়া অবিলম্বে গৃহাভিমুখে যাত্রা করিলেন। তারাপ্রসন্ন গৃহিণীর নিকট আসিয়া অত্যন্ত আড়ম্বরের সহিত প্রফুল্লতা প্রকাশ করিলেন। দীক্ষায়ণী শুভ সংবাদের জন্য সহাস্যমুখে প্রতীক্ষা করিয়া রহিলেন । তখন তারাপ্রসন্ন একখানি ‘গৌড়বার্তাবহ আনিয়া গৃহিণীর ক্রোড়ে ফেলিয়া দিলেন। পাঠ করিয়া তিনি মনে-মনে সম্পাদকের অক্ষয় ধনপুত্ৰ কামনা করিলেন ; এবং তাহার লেখনীর মুখে মানসিক পুষ্পচন্দন-অৰ্ঘ্য উপহার দিলেন। পাঠ সমাপন করিয়া আবার স্বামীর মুখের দিকে চাহিলেন । স্বামী তখন নবপ্রভাত’ আনিয়া খুলিয়া দিলেন। পাঠ করিয়া আনন্দবিহবলা দীক্ষায়ণী আবার স্বামীর মুখের প্রতি প্রত্যাশাপূর্ণ স্নিগ্ধনেত্র উত্থাপিত করিলেন। তখন তারাপ্রসন্ন একখণ্ড ‘যুগান্তর’ বাহির করিলেন। তাহার পর ? তাহার পর ‘ভারতভাগ্যচক্র । তাহার পর ? তাহার পর ‘শুভজাগরণ তাহার পর ‘অরুণালোক’, তাহার পর ‘সংবাদতরঙ্গভঙ্গ’ । তাহার পর— আশা, আগমনী, উচ্ছ্বাস, পুষ্পমঞ্জরী, সহচরী, সীতা-গেজেট, অহল্যালাইব্রেরি-প্রকাশিকা, ললিত সমাচার, কোটাল, বিশ্ববিচারক, লাবণ্যলতিকা । হাসিতে হাসিতে গৃহিণীর আনন্দাশ্র পড়িতে লাগিল । চোখ মুছিয়া আর-একবার স্বামীর কীর্তিরশ্মিসমুজ্জল মুখের দিকে চাহিলেন,— স্বামী বলিলেন, “এখনো অনেক কাগজ বাকি আছে।” দীক্ষায়ণী বলিলেন, “সে বিকালে দেখিব, এখন অন্য খবর কী বলে।”