পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ 80% তুমি বই লইয়া যাও।” এই বলিয়া কানাই পালের সহিত অনেক বলাকহা করিয়া কিঞ্চিৎ টাকা সংগ্ৰহ করিয়া আনিল এবং বিধুভূষণ স্বয়ং গিয়া নিজে হইতে পাথেয় দিয়া কলিকাতা হইতে ধাত্রী আনিল । দীক্ষায়ণী কী মনে করিয়া স্বামীকে ঘরে ডাকাইয়া আনিলেন এবং মাথার দিব্য দিয়া বলিলেন, “যখনি তোমার সেই বেদনার উপক্রম হইবে, স্বপুলব্ধ ঔষধটা খাইতে ভূলিয়ে না। আর, সেই সন্ন্যাসীর মাদুলিট কখনোই খুলিয়। রাখিয়ে না।” আর এমন ছোটোখাটো সহস্ৰ বিষয়ে স্বামীর দুটি হাতে ধরিয়া অঙ্গীকার করাইয়া লইলেন। আর বলিলেন, বিধুভুষণের উপর কিছুই বিশ্বাস নাই, সেই তাহার স্বামীর সর্বনাশ করিয়াছে। নতুবা ঔষধ মাদুলি এবং মাথার-দিব্য সমেত র্তাহার সমস্ত স্বামীটিকে তাহার হস্তে দিয়া যাইতেন। তারপরে মহাদেবের মতো তাহার বিশ্বাসপ্রবণ ভোলানাথ স্বামীটিকে পৃথিবীর নির্মম কুটিলবুদ্ধি চক্রান্তকারীদের সম্বন্ধে বারবার সতর্ক করিয়া দিলেন। অবশেষে চুপিচুপি বলিলেন, “দেখে, আমার যে-মেয়েটি হইবে, সে যদি বঁাচে তাহার নাম রাখিয়ে ‘বেদান্তপ্রভা, তারপরে তাহাকে শুধু প্রভা বলিয়া ডাকিলেই চলিবে।” এই বলিয়া স্বামীর পায়ের ধুলা মাথায় লইলেন। মনে-মনে কহিলেন, কেবল কন্যা জন্ম দিবার জন্যই স্বামীর ঘরে আসিয়াছিলাম। এবার বোধ হয় সে আপদ ঘুচিল। ধাত্রী যখন বলিল, “মা, একবার দেখো, মেয়েটি কী সুন্দর হয়েছে”— মা একবার চাহিয়া নেত্র নির্মীলন করিলেন, মৃদুস্বরে বলিলেন ‘বেদান্তপ্রভা’। তারপরে ইহসংসারে আর-একটি কথা বলিবারও অবসর পাইলেন না। २२av ?