পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8QWり রবীন্দ্র-রচনাবলী মধ্যেই একটা সার্থকতা আছে। সেই ভূমাকে আকাঙ্ক্ষা করাই আত্মার মাহাত্ম্য— ভূমৈব সুখং নাল্পে স্বথমস্তি, এই কথাটি-যে মানুষ বলতে পেরেছে, এতেই তার মচুন্যত্ব । ছোটোতে তার মুখ নেই, সহজে তার সুখ নেই, এইজন্যেই সে গভীরকে চায়– তবু যদি তুমি বল, “আমার হাতের তেলোর মধ্যে সহজকে এনে দাও, তবে তুমি আর-কিছুকে চাচ্ছ। বস্তুত, যা সহজ, অর্থাৎ যাকে আমরা অনায়াসে দেখছি, অনায়াসে শুনছি, অনায়াসে বুঝছি, তার মতো কঠিন আবরণ আর নেই। যিনি গভীর তিনি এই অতিপ্রত্যক্ষগোচর সহজের দ্বারাই নিজেকে আবৃত করে রেখেছেন। বহুকালের বহু চেষ্টায় এই সহজদেখাশোনার আবরণ ভেদ করেই মানুষ বিজ্ঞানের সত্যকে, দর্শনের তত্ত্বকে দেখেছে, যা-কিছু পাওয়ার মতো পাওয়া তাকে লাভ করেছে। * শুধু তাই নয়, কর্মক্ষেত্রেও মানুষ বহু সাধনায় আপনার সহজ প্রবৃত্তিকে ভেদ ক’রে তবে কর্তব্যনীতিতে গিয়ে পৌচেছে। মানুষ আপনার সহজ ক্ষুধাতৃষ্ণকেই বিনা বিচারে মেনে পশুর মতো সহজ জীবনকে স্বীকার করে নেয় নি ; এইজন্যেই শিশুকাল থেকে প্রবৃত্তির উপরে জয়লাভ করবার শিক্ষা নিয়ে তাকে দুঃসাধ্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে —বারংবার পরাস্ত হয়েও সে পরাভব স্বীকার করতে পারছে না। শুধু চরিত্রে এবং কর্মে নয়, হৃদয়ভাবের দিকেও মানুষ সহজকে অতিক্রম করবার পথে চলেছে ; ভালোবাসাকে মানুষ নিজের থেকে পরিবারে, পরিবার থেকে দেশে, দেশ থেকে সমস্ত মানবসমাজে প্রসারিত করবার চেষ্টা করছে। এই দুঃসাধ্য সাধনায় সে যতই অকৃতকার্য হ’ক, একে সে কোনোমতেই অশ্রদ্ধা করতে পারে না ; তাকে বলতেই হবে, যদিচ স্বাৰ্থ আমার কাছে স্বপ্রত্যক্ষ ও সহজ এবং পরার্থ গৃঢ়নিহিত ও দুঃসাধ্য, তৰু স্বার্থের চেয়ে পরার্থই সত্যতর এবং সেই দুঃসাধ্যসাধনার দ্বারাই মানুষের শক্তি সার্থক হয় সুতরাং সে গভীরতর আনন্দ পায়, অর্থাৎ এই কঠিন ব্ৰতই আমাদের গুহাহিত মানুষটির যথার্থ জীবন– কেননা, তার পক্ষে নাল্পে সুখমস্তি । জ্ঞানে ভাবে কর্মে মানুষের পক্ষে সর্বত্রই যদি এই কথাটি খাটে, জ্ঞানে ভাবে কর্মে সর্বত্রই যদি মানুষ সহজকে অতিক্রম ক’রে গভীরের দিকে যাত্রা করার দ্বারাই সমস্ত শ্ৰেয় লাভ করে থাকে, তবে কেবল কি পরমাত্মার সম্বন্ধেই মানুষ দীনভাবে সহজকে প্রার্থনা ক’রে আপনার মনুষ্যত্বকে ব্যর্থ করবে ? মানুষ যখন টাকা চায় তখন সে একথা বলে না, টাকাকে ঢেলা করে দাও, আমার পক্ষে পাওয়া সহজ হবে।”— টাকা দুর্লভ বলেই প্রার্থনীয় ; টাকা ঢেলার মতো সুলভ হলেই মানুষ তাকে চাইবে না। তবে ঈশ্বরের সম্বন্ধেই কেন আমরা উলটা কথা বলতে যাব । কেন বলব, তাকে