পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন 8ህr¢ করতে পারি নে। যিনি চিরযুবা তিনি তাকে যৌবনে মণ্ডিত জগতের মাঝখানে হাতে ধরে দাড় করিয়ে দিয়েছেন। চিরকাল ধরে কত যুবাকেই যে তিনি যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করে এসেছেন, তার আর সীমা নেই। তাই যৌবনের মধ্যে চরমের আস্বাদ পেয়ে চিরদিন যুবারা যৌবনকে চরমরূপে পাবার আকাঙ্ক্ষা করেছে। প্রবীণরা তাই দেখে হেসেছে। মনে করেছে যুবারা এই-সমস্ত নিয়ে ভুলে আছে কেমন করে । ত্যাগের মধ্যে রিক্ততার মধ্যে যে বাধাহীন পরিপূর্ণতা, সেই অমৃতের স্বাদ এরা পায় নি। তিনি চিরপুরাতন যিনি পরমানন্দে আপনাকে নিয়তই ত্যাগ করছেন, যিনি কিছুই চান না ; তিনিই বৃদ্ধের বন্ধু হয়ে পুর্ণতার দ্বারস্বরূপ যেত্যাগ, অমৃতের দ্বারস্বরূপ যে-মৃত্যু, তারি অভিমুখে আপনি হাতে ধরে নিয়ে চলেছেন। এমনি করে অনন্ত যদি পদে পদেই আমাদের কাছে না ধরা দিতেন, তবে অনন্তকে আমরা কোনো কালেই ধরতে পারতুম না। তবে তিনি আমাদের কাছে না। হয়েই থাকতেন । কিন্তু পদে পদে তিনিই আমাদের ‘ই’ । বাল্যের মধ্যে যে ই সে তিনিই, সেইখানেই বাল্যের সৌন্দর্য ; যৌবনের মধ্যে যে ই সেও তিনিই, সেইখানেই যৌবনের শক্তি সামর্থ্য ; বাধক্যের মধ্যে যে ই সেও তিনিই, সেইখানেই বাধক্যের চরিতার্থতা। খেলার মধ্যেও পুর্ণরূপে তিনি, সংগ্রহের মধ্যেও পুর্ণরূপে তিনি এবং ত্যাগের মধ্যেও পুর্ণরূপে তিনি। এইজন্যেই পথও আমাদের কাছে এমন রমণীয়, এইজন্যে সংসারকে আমরা ত্যাগ করতে চাই নে । তিনি-যে পথে আমাদের সঙ্গে সঙ্গে চলেছেন। পথের উপর আমাদের এই-যে ভালোবাসা, এ তারি উপর ভালোবাসা। মরতে আমরা যে এত অনিচ্ছা করি, এর মধ্যে আমাদের মনের এই কথাটি আছে যে, "হে প্রিয়, জীবনকে তুমি আমাদের কাছে প্রিয় করে রেখেছ – ভুলে যাই, যিনি প্রিয় করেছেন, মরণেও তিনিই আমাদের সঙ্গে চলেছেন । r আমাদের বলবার কথা এ নয় যে, এটা অপুর্ণ ওটা অপুর্ণ, অতএব এ সমস্তকে আমরা পরিত্যাগ করব। আমাদের বলবার কথা হচ্ছে এই যে, এরি মধ্যে যিনি পুর্ণ র্তাকে আমরা দেখব । ক্ষেত্রকে বড়ো করেই যে আমরা পুর্ণকে দেখি তা নয়, পুর্ণকে দেখলেই আমাদের ক্ষেত্র বড়ো হয়ে যায়। আমরা যেখানেই আছি, যে-অবস্থায় অাছি, সকলের মধ্যেই যদি তাকে দেখবার অবকাশ না থাকত, তা হলে কেউ কোনো কালেই তাকে দেখবার আশা করতে পারতুম না। কারণ, আমরা যে যতদূরই অগ্রসর হই-না, অনন্ত যদি ধরা না দেন তবে কোনো কৌশলে কারো তাকে নাগাল পাবার সম্ভাবনা কিছুমাত্র থাকে না।