পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন 8> Ꮌ প্রিয়জনের মৃত্যুর পরে প্রেমের আলোকে আমরা এই অনন্ত অমৃতলোককে আবিষ্কার করে থাকি। সেই তো আমাদের শ্রদ্ধার দিন— সত্যের প্রতি শ্রদ্ধা, অমৃতের প্রতি শ্রদ্ধা। শ্রাদ্ধের দিনে আমরা মৃত্যুর সম্মুখে দাড়িয়ে অমৃতের প্রতি সেই শ্রদ্ধা নিবেদন করি ; আমরা বলি, মাকে দেখছি নে কিন্তু মা আছেন। চোখে দেখে, হাতে ছুয়ে যখন বলি ‘মা আছেন, তখন সে তো শ্রদ্ধা নয়— আমার সমস্ত ইন্দ্রিয় যেখানে শূন্যতার সাক্ষ্য দিচ্ছে সেখানে যখন বলি ‘মা আছেন, তখন তাকেই যথার্থ বলে শ্রদ্ধা। নিজে যতক্ষণ পাহারা দিচ্ছি ততক্ষণ যাকে বিশ্বাস করি, তাকে কি শ্রদ্ধা করি। গোচরে এবং অগোচরেও যার উপর আমার বিশ্বাস অটল, তারি উপর আমার শ্রদ্ধা। মৃত্যুর অন্ধকারময় অন্তরালেও যাকে আমার সমস্ত চিত্ত সত্য বলে উপলব্ধি করছে, তাকেই তো যথার্থ আমি সত্য বলে শ্রদ্ধা করি । সেই শ্রদ্ধাই প্রকাশ করার দিন শ্রাদ্ধের দিন। মাতার জীবিতকালে যখন বলেছি, মা তুমি আছ — তার চেয়ে ঢের পরিপূর্ণ করে বলা, আজকের বলা যে, মা তুমি আছে।’ তার মধ্যে আর-একটি গভীরতর শ্রদ্ধার কথা আছে— ‘পিতা নোহসি । হে আমার অনন্ত পিতামাতা, তুমি আছ, তাই আমার মাকে কোনো দিন হারাবার জো নেই।’ যেদিন বিশ্বব্যাপী অমৃতের প্রতি এই শ্রদ্ধা সমুজ্জল হয়ে ওঠবার দিন, সেইদিনকারই আনন্দমন্ত্র হচ্ছে— মধু বাতা ঋতীয়তে মধু ক্ষরস্তি সিন্ধবঃ মাধবীর্নঃ সন্তুাষধী: | মধু নক্তম উতোষসঃ মধুমং পার্থিবং রজঃ মধু ছৌরস্তু ন; পিতা । মধুমান্নো বনস্পতি মধুমান অস্তু সূৰ্য: মাধবীর্গাবো ভবন্তু নঃ। এই আনন্দমন্ত্রের দ্বারা পৃথিবীর ধূলি থেকে আকাশের স্বৰ্ষ পর্যন্ত সমস্তকে অমৃতে অভিষিক্ত করে মধুময় করে দেখবার দিন এই শ্রাদ্ধের দিন। সত্যম– তিনি সত্য, অতএব সমস্ত র্তার মধ্যে সত্য, এই শ্রদ্ধা যেদিন পুর্ণভাবে বিকশিত হয়ে ওঠে, সেই দিনই আমরা বলতে পারি আনন্দম– তিনি আনন্দ এবং তার মধ্যেই সমস্ত আনন্দে পরিপূর্ণ।