পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শাস্তিনিকেতন 8 సె\రి গভীর হয়ে ওঠে না ; তার চাবুক এবং লাগামকেই স্বীকার করে, বৃহৎ এবং স্বন্দর শেষকে তারা মানে না। ’ তারা যৌবনকে যৌবন পেরিয়েও টানাটানি করে নিয়ে চলে ; সেই দুঃসাধ্য ব্যাপারে কাঠ খড় এবং চেষ্টার অার অবধি থাকে না— তা ছাড়া কত লজ্জা, কত ভাবনা, কত ভয় । ফল যখন পাকে তখন শাখা ছেড়ে যাওয়াই তার গৌরব। কিন্তু শাখা ত্যাগ করাকে যদি দীনতা ব’লে মনে করে, তবে তার মতে কৃপাপাত্র আর কে আছে। নিজের স্থানকে অধিকার করার সঙ্গে সঙ্গে এই কথাটি মনের মধ্যে রাখতে হবে যে, এই অধিকারকে সম্পূর্ণ করে তুলে একে ত্যাগ করে যাব ; এই অধিকারকে যেমন করে পারি শেষ পর্যন্ত টানাহেঁচড়া করে রক্ষা করতেই হবে— তাতেই আমার সম্মান, আমার কৃতিত্ব, এই শিক্ষাই যারা শিশুকাল থেকে শিখে এসেছে, অপঘাত যতক্ষণ তাদের পেয়াদার মতো এসে জোর করে টেনে নিয়ে না যায় ততক্ষণ তারা দুই হাতে আসন অঁাকড়ে পড়ে থাকে । _F আমাদের দেশে অবসানকে স্বীকার করে, এইজন্যে তার মধ্যে অগৌরব দেখতে পায় না। এইজন্যে ত্যাগ করা তার পক্ষে ভঙ্গ দেওয়া নয় । কেননা সেই ত্যাগ বলতে তো রিক্ততা বোঝায় না। পাকা ফলের ডাল ছেড়ে মাটিতে পড়াকে তো ব্যর্থতা বলতে পারি নে। মাটিতে তার চেষ্টার আকার এবং ক্ষেত্র -পরিবর্তন হয়— সেখানে সে নিশ্চেষ্টতার মধ্যে পলায়ন করে না । সেখানে বৃহত্তর জন্মের উদ্যোগপর্ব, সেখানে অজ্ঞাতবাসের পালা। সেখানে বাহির হতে ভিতরে প্রবেশ । আমাদের দেশে বলে, পঞ্চাশোধং বনং ব্ৰজেং | কিন্তু সে বন তো আলস্তের বন নয়, সে-যে তপোবন । সেখানে মানুষের এতকালের সঞ্চয়ের চেষ্টা, দানের চেষ্টার ক্ষেত্রে প্রবেশ করে। করার আদর্শ মামুষের একমাত্র আদর্শ নয়, হওয়ার আদর্শ ই খুব বড়ো জিনিস । ধানের গাছ যখন রৌদ্রবৃষ্টির সঙ্গে সংগ্রাম করতে করতে বাড়ছিল সে খুব সুন্দর, কিন্তু ফসল ফলে যখন তার মাঠের দিন শেষ হয়ে ঘরের দিন আরম্ভ হয় তখন সেও সুন্দর। সেই ফসলের মধ্যে ধানখেতের সমস্ত রৌদ্রবৃষ্টির ইতিহাস নিবিড়ভাবে নিস্তন্ধ হয়ে আছে ব’লে কি তার কোনো অগৌরব আছে ? মানুষের জীবনকেও কেবল তার খেতের মধ্যেই দেখব, তার ফসলের মধ্যে দেখব না, এমন পণ করলে সে জীবনকে নষ্টই করা হয়। তাই বলছি, মামুষের জীবনে > é|७२