পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8>8 রবীন্দ্র-রচনাবলী এমন একটি সময় আসে যখন তার থামার সময় । মানুষের কাজের সময়ে আমরা মামুষের কাছ থেকে যে-জিনিসটা আদায় করি, তার থামার সময়েও আমরা যদি সেই জিনিসটাই দাবি করি, তা হলে কেবল যে অন্যায় করা হয় তা নয়, নিজেকে বঞ্চিত করাই হয় । থামার সময় মানুষের কাছে আমরা যেটা দাবি করতে পারি, সেটা করার আদর্শ নয়— সেটা হওয়ার আদর্শ। যখন সমস্তই কেবল চলছে, কেবলই ভাঙাগড়া এবং ওঠাপড়, তখন সেই হওয়ার আদর্শটিকে সম্পূর্ণভাবে স্থিরভাবে আমরা দেখতে পাই নে— যখন চলা শেষ হয় তখন হওয়াকে আমরা দেখতে পাই । মানুষের এই সমাপ্ত ভাবটি, এই স্থিররূপটি দেখারও প্রয়োজন আছে । খেতের চারা এবং গোলার ধান আমাদের দুইই চাই । কেজো লোকেরা কাজকেই একমাত্র লাভ বলে মনে করে— এইজন্য মানুষের কাছ থেকে তার অন্তিমকাল পর্যন্ত কেবল কাজ আদায় করবারই চেষ্টা করে। যে-সমাজে যেরকম দাবি সেই দাবি অনুসারেই মানুষের মুল্য। যেখানে সমাজ যুদ্ধ দাবি করে সেখানে যোদ্ধারই মূল্য বেশি, সুতরাং সকলেই আর-সমস্ত চেষ্টাকে সংহরণ ক’রে যোদ্ধা হবার জন্যেই প্রাণপণে চেষ্টা করে। যেখানে কাজের দাবি অতিমাত্র, সেখানে অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত কেজো ভাবেই আপনাকে প্রচার করার দিকে মানুষের একান্ত প্রয়াস। সেখানে মানুষের দাড়ি নেই বললেই হয়, সেখানে কেবলই অসমাপিকা ক্রিয়া । সেখানে মানুষ যে-জায়গায় থামে সে-জায়গায় কিছুই পায় না, কেবল লজ্জা পায় ; সেখানে কাজ একটা মদের মতো, ফুরোলেই অবসাদ ; সেখানে স্তব্ধতার মধ্যে মানুষের কোনো বৃহৎ ব্যঞ্জনা নেই ; সেখানে মৃত্যুর রূপ অত্যন্তই শূন্ত এবং বিভীষিকাময় এবং জীবন সেখানে নিরস্তর মথিত, ক্ষুব্ধ, পীড়িত ও শতসহস্র কলের কৃত্রিম তাড়নায় গতিপ্রাপ্ত । সামঞ্জস্য এই বিশ্বচরাচরে আমরা বিশ্বকবির যে-লীলা চারিদিকেই দেখতে পাচ্ছি সে হচ্ছে সামঞ্জস্তের লীলা । স্বর, সে যত কঠিন স্বরই হ’ক, কোথাও ভ্ৰষ্ট হচ্ছে না ; তাল, সে যত দুরূহ তালই হ’ক, কোনো জায়গায় তার স্খলনমাত্র নেই। চারিদিকেই গতি এবং ফুর্তি, স্পন্দন এবং নর্তন, অথচ সর্বত্রই অপ্ৰমত্তত। পৃথিবী প্রতি মুহূর্তে