পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় &२१ পড়ে তখন তারা পুর্বদলের পুরানো পরিত্যক্ত বাসায় আশ্রয় নিতে চায় না ; নতুন বাসা না বাধতে পারলে তাদের মানায় না, কুলোয় না। ক্ষণিকার বাসা আর বলাকার বাসা এক নয় । আমি নিজে মহুয়ার কবিতার মধ্যে দুটো দল দেখতে পাই। একটি হচ্ছে নিছক গীতিকাব্য, ছন্দ ও ভাষার ভঙ্গীতেই তার লীলা । তাতে প্রণয়ের প্রসাধনকলা মুখ্য । আর-একটিতে ভাবের আবেগ প্রধান স্থান নিয়েছে, তাতে প্রণয়ের সাধনবেগই প্রবল । মহুয়ার ‘মায়া’ নামক কবিতায় প্রণয়ের এই দুই ধারার পরিচয় দেওয়া হয়েছে। প্রেমের মধ্যে স্বষ্টিশক্তির ক্রিয়া প্রবল। প্রেম সাধারণ মানুষকে অসাধারণ ক’রে রচনা করে— নিজের ভিতরকার বর্ণে রসে রূপে । তার সঙ্গে যোগ দেয় বাইরের প্রকৃতি থেকে নানা গান গন্ধ, নানা আভাস । এমনি ক’রে অন্তর-বাহিরের মিলনে চিত্তের নিভৃত লোকে প্রেমের অপরূপ প্রসাধন নির্মিত হতে থাকে— সেখানে ভাবে ভঙ্গীতে সাজে সজ্জায় নূতন নূতন প্রকাশের জন্য ব্যাকুলত, সেখানে অনির্বচনীয়ের নানা ছন্দ, নানা ব্যঞ্জনা । একদিকে এই প্রসাধনের বৈচিত্র্য, আর-একদিকে এই উপলব্ধির নিবিড়তা ও বিশেষত্ব। মহুয়ার কবিতা চিত্তের সেই মায়ালোকের কাব্য, তার কোনো অংশে ছন্দে ভাষায় ভঙ্গীতে এই প্রসাধনের আয়োজন, কোনো অংশে উপলব্ধির প্রকাশ । এই দুয়ের মধ্যে নূতনের বাসস্তিক স্পর্শ নিশ্চয় আছে– নইলে লিখতে আমার উৎসাহ থাকত না । তুমি তো জানই কত অল্প সময়ের মধ্যে এগুলি সমাধা করেছি। তার কারণ প্রবর্তনার বেগ মনে সতেজ ছিল । তাই অন্যমনস্কভাবে এই পত্রের পুর্বাংশে তোমাকে যা লিখেছি অপরাংশে তার প্রতিবাদ করতে হল। বলেছিলুম এ লেখাগুলি আকস্মিক । ভুলেছিলুম সব কবিতাই যখনি লেখা যায় তখনি আকস্মিক । সব কবিতা বললে হয়তো বেশি বলা হয়। এক-একটা সময়ে এক-একটা নতুন বাকের কবিতা । বারো মাসে পৃথিবীর ছয় ঋতু বাধা, তাদের পুনরাবর্তন ঘটে। কিন্তু আমার বিশ্বাস, একবার আমার মন থেকে যেঋতু যায়, সে আর-এক অপরিচিত ঋতুর জন্যে জায়গা ক’রে বিদায় গ্রহণ করে। পূর্বকালের সঙ্গে কিছু মেলে না, এ হতেই পারে না, কিন্তু সে যেন শরতের সঙ্গে শীতের মিলনের মতো। মনের যে-ঋতুতে মহুয়া লেখা সে আকস্মিক ঋতুই, ফর্মাসের ধাক্কায় আকস্মিক নয়, স্বভাবতই আকস্মিক । এগুলি যখন লিখছিলুম অপূর্বকুমার প্রায় রোজ এসে শুনে যেত, সে যে-উত্তেজনা প্রকাশ করত সেটা ১ খ্ৰীঅপূর্বকুমার চল