পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিবেদন রবীন্দ্র-রচনাবলী ‘অচলিত সংগ্ৰহ দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হইল। এই ‘বর্জিত’ গ্ৰন্থসমূহের পুনঃপ্রকাশ সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথের মত ‘আচলিত সংগ্রহের প্ৰথম খণ্ডের পাঠকগণ অবগত আছেন। ‘আচলিত সংগ্ৰহ প্ৰথম খণ্ড প্রকাশিত হইলে তিনি আমাদের নিকট যে পত্র লিখিয়াছিলেন, নিম্নে তাহা মুদ্রিত হইল

  • আপনাদের কর্তৃক প্রকাশিত আমার আচলিত রচনার কিছু কিছু অংশ অপটু শরীরে পড়েছি। এই শ্রেণীর লেখা সম্বন্ধে আমার বিতৃষ্ণ পূর্বেই জানিয়েছি। এখন আর অধিক বলবার শক্তি নেই, কেবল একটা নতুন কারণ আমার মনে আঘাত করেছে, সংক্ষেপে বলব, সে এই- অকৃত্রিম কাচা রচনায় কোনো দোষ নেই, বরঞ্চ তা স্নেহহাস্যের যোগ্য। যেমন শিশুর কাচা হাতের ছবি সমালোচনা করবার সময় তার যেটুকু স্বাভাবিক রমণীয়তা আছে, তা গুণীরা দেখতে পান। কিন্তু বাক্ষ্যমাণ রচনাগুলির মধ্যে যা নিলজিভাবে প্রকাশ পাচে, সে হচ্চে অকালে উদগত নকল কবিত্ব। বড়ো বয়সের যোগ্য বড়ো বড়ো কথা বলবার স্পর্ধা। এই সব লেখার মধ্যে সর্বত্র অত্যন্ত কাচা ভাষায় দেখা দিয়েছে। সেটাকে ছোটো লেখা বলে স্নেহ করা যায় না, বড়ো লেখা বলে মাপও করা অসম্ভব হয়। এই সব ভৎসনাসহ-বৰ্জনীয় প্ৰগলভ্যতা যখন দেখা যায় তখন বয়স গণনা করে তাকে কিছুমাত্র সমাদর করা যায় না। বেশি লেখবার শক্তি আমার নেই, কিন্তু এই রচনাগুলির প্রতি আমার বিমুখতার কারণ লিপিবদ্ধ করে আপনাকে জানানো কর্তব্য মনে করে কষ্ট স্বীকার করেও এই কটি পঙক্তি দৃতহস্তে পাঠিয়ে দিলুম।

‘একটা কেবল সাস্ত্ৰনার বিষয় শুধু ক্ষণে ক্ষণে মনে জেগে ওঠে- সেই যুগটাই নকলের যুগ। পূর্ববতী সাহিত্যের আবির্ভাব তখনো সে সম্পূৰ্ণ আপনার করে নিতে পারে নি। সে-যুগের ইংরেজ কবিদের মধ্যে যাদের রচনা গ্ৰহণ করবার শক্তি জেগেছিল, সেটা বাইরে থেকে বাঙ্গরূপেই প্ৰকাশ পেয়েছে। তখন আমাদের যারা প্ৰশংসা করেছেন তারা নকল শেলি বায়রনরপে আমাদের অভিহিত করে আমাদের গৌরব দান করেছেন। অর্থাৎ আমরা সে-সকল আহরিত সাহিত্যসম্পদ তখনো স্বকীয় করে নিতে পারি নি। সুতরাং আমাদের মধ্যে যদি তাদের প্রভাব অক্ষম অনুকরণের পথে চালনা করে থাকে, তবে হয়তো সেই যুগের লজ্জার ভাগী আমরা সকলেই। যে-বয়সে এই যুগ স্বভাবত উপনীত হতে পারে নি, সেই বয়সকে ডিঙিয়ে যাবার চেষ্টা করেছে। ‘তখন যে এ দেশের কচিসাহিত্যসমাজে কেবল বিদেশী কবির গোপ-দাড়ির চর্চা চলেছিল তা নয়- বালখিল্য গারিবলডির দলকেও খোড়া গতিতে সদর রাস্তায় কুচকাওয়াজ করিয়ে তরুণীরা গীেরব বোধ করছিল। এবং তার মধ্যে মধ্যে নকল গ্যারিকের প্রতি হাততালি প্ৰতিধ্বনিত হয়ে উঠেছিল। ইতি কলিকতা, ১৮ই কীর্তিক, S08. '