পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SVO রবীন্দ্র-রচনাবলী যতোবাচো নিবৰ্ত্তন্তে অপ্রাপ্য মনসা সহ আনন্দং ব্ৰহ্মণো বিদ্বান ন বিভৌতি কৃতশ্চন। আর কাহা হইতেও ভয় পান না। অতএব ব্রহ্মের সেই বাক্যমনের অগোচর অনন্ত পরিপূর্ণতা উপলব্ধি করিলে তবেই আমাদের ভয় দুঃখ নিঃশেষে নিরন্ত হয়। তাহাকে বিশ্বজগতের অন্যান্য বস্তুর নায় বাঙমনোগোচর ক্ষুদ্র করিয়া, খণ্ড করিয়া, দেখিলে আমরা সেই পরম অভয়, সেই ভূম আনন্দ, লাভ করিতে পারি না। আমরা তো সংসারের সংকীর্ণতা দ্বারা প্রতিহত, জটিলতা-দ্বারা উদভ্ৰান্ত, খণ্ডতা-দ্বারা শতধা-বিক্ষিপ্ত হইয়া আছি- আমরা জানি সংসারের স্রোতাংসি সর্ববাণি ভয়াবহানি- সংসারের সমুদয় স্রোত ভয়াবহ - সকলেরই মধ্যে ভয়দুঃখক্লেশ জরামৃত্যুবিচ্ছেদের কারণ রহিয়াছে- অতএব আমরা যখন শান্তি চাই, অভয় চাই, আনন্দ চাই, অমৃত চাই, তখন সহজেই স্বভাবতই কাহাকে চাই ? যাহাকে পাইলে শান্তিমত্যািম্ভমেতি, অত্যন্ত শান্তি পাওয়া যায়। তিনি কে ? উপনিষৎ বলেন স বৃক্ষকালাকৃতিভিঃ, পরোহন্যঃ- তিনি সংসার কাল এবং আকৃতি অর্থাৎ সাকার পদার্থ হইতে পরঃ, শ্ৰেষ্ঠ, এবং অন্যঃ অর্থাৎ ভিন্ন। যদি তিনি সংসার কাল ও সাকার পদার্থ হইতে শ্রেষ্ঠ এবং ভিন্ন না। হইতেন তবে তো সংসােরই আমাদের যথেষ্ট ছিল- তবে তো তঁহাকে অন্বেষণ করিবার প্রয়োজন ছিল ନୀ । বিশ্বস্যৈকং পরিবেষ্টিতারিং জ্ঞাত্বা শিবং শান্তিমতান্তমেতি। বিশ্বের একমাত্র পরিবেষ্টিতাকে জানিয়া অত্যন্ত শিব এবং অত্যন্ত শান্তি পাওয়া যায়। অতএব যাহারা বলেন আমরা সেই ভূমি-স্বরূপকে আয়ত্ত করিতে পারি না, সেইজনা তাহাতে আমাদের স্থিতি আমাদের শান্তি নাই, তাহারা উপনিষৎকথিত পরম সত্য হইতে স্বলিত হইতেছেন যতোবাচো নিবৰ্ত্তন্তে অপ্রাপা মনসা সহ আনন্দং ব্ৰহ্মণো বিদ্বান ন বিভেতি কদাচন। বাকী মন যাহাকে আয়ত্ত করিতে পারে না। তাহতেই আমাদের পরম আনন্দ, আমাদের অনন্ত অভয়। যৎ বাঁচা নাভূদিতং যেন বাক অভুদ্যতে তদেব ব্ৰহ্ম ত্বং বিদ্ধি নেদং যদিদমুপাসতে। যিনি বাক্য দ্বারা উদিত নহেন, বাকী যাহার দ্বারা উদিত, তিনিই ব্ৰহ্ম, তাহাকে তুমি জানো- এই যাহা কিছু উপাসনা করা যায় তাহা ব্ৰহ্ম নহে। যন্মনসা ন মনুতে যেনাহুর্মনোমতম তদেব ব্ৰহ্মা তুং বিদ্ধি নেদং যদিদমুপাসতে। মনের দ্বারা র্যাহাকে মনন করা যায় না, যিনি মনকে জানেন, তিনিই ব্ৰহ্মা, তাহাকে তুমি জানো- এই যাহা কিছু উপাসনা করা যায় তাহা ব্ৰহ্ম নহে। ধাহাকে বলা যায় না, যাহাকে ভাবা যায় না, তাহাকেই জানিতে হইবে। কিন্তু তঁহাকে সম্পূৰ্ণ জানা সম্ভব নহে— যদি তাহাকে সম্পূৰ্ণ জানা সম্ভব হইত। তবে তঁহাকে জানিয়া আমাদের আনন্দামৃত লাভ হইত না। তঁহাকে আমরা অন্তরাত্মার মধ্যে এতটুকু জানি যাহাতে বুঝিতে পারি তাহাকে জানিয়া শেষ করা যায় না এবং তাঁহাতেই আমাদের আনন্দের শেষ থাকে না। নাহং মন্যে সুবেদেতি নো ন বেদেতি বেদ চ। যো নন্তদবেদ তদবেদ নো ন বেদেতি বেদ চ। তঁহাকে সম্পূর্ণরূপে জানি এমন আমি মনে করি না, না জানি যে তাহাও নহে, আমাদের মধ্যে যিনি তাহাকে জানেন তিনি ইহা জানেন যে- তাহাকে জানি এমনও নহে, না জানি এমনও নহে। শিশু কি তাহার মাতার সম্যক পরিচয় জানে? কিন্তু সে অনুভবের দ্বারা এবং এক অপূর্ব সংস্কার-দ্বারা এটুকু ধ্রুব জানিয়াছে যে, তাহার ক্ষুধার শান্তি, তাহার ভয়ের নিবৃত্তি, তাহার সমস্ত আরাম