পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আলোচনা ○> জগতের ধর্ম অতএব প্রকৃতির মধ্যে যে ধ্রুব বর্তমান, স্বেচ্ছাপূর্বক সচেতনে সেই ধুবের অনুগামী হওয়াই ধর্ম। ধর্ম শব্দের অর্থই দেখো-না কেন। যাহাতে আবরণ বা নিবারণ করে তাহাঁই বৰ্ম, যাহাতে ধারণ করে তাহাই ধর্ম। দ্রব্যবিশেষের ধর্ম কী? যাহা অভ্যন্তরে বিরাজ করিয়া সেই দ্রব্যকে ধারণ করিয়া আছে; অর্থাৎ যাহার প্রভাবে সেই দ্রব্যের দ্রব্যত্ব খাড়া হইয়াছে।। জগতের ধর্ম কী? জগৎ যে আচল নিয়মের উপর আশ্রয় করিয়া বর্তমান রহিয়াছে তাহাই জগতের ধর্ম, এবং তাঁহাই জগতের প্রত্যেক অণুকণার ধর্ম। উদাহরণ একটি উদাহরণ দিই। জগতের একটি প্রধান ধর্ম পরার্থপরতা। স্বার্থপরতা জগতের ধর্ম-বিরুদ্ধ। এই নিমিত্ত জগতের কোথাও স্বার্থপর নাই। পরের জন্য কাজ করিতেই হইবে তা ইচ্ছা করি আর না-কর। জগতের প্রত্যেক পরমাণু তাহার পরবতী ও তাহার নিকটবতীর জন্য, তাহার নিজের মধ্যে তাহার বিরাম নাই। তাহার প্রত্যেক কাৰ্য অনন্ত জগতের লক্ষকোটি স্নায়ুর মধ্যে তরঙ্গিত হইতেছে। একটি বালুকণা যদি কেহ ধ্বংস করিতে পারে তবে নিখিল ব্ৰহ্মাণ্ডের পরিবর্তন হইয়া যায়। তুমি স্বার্থপরভাবে বিদা উপাৰ্জন ও মনের উন্নতি সাধন করিলে, কিন্তু জানিতেও পাবিলে না, সে বিদ্যার ও সে উন্নতির লক্ষকোটি উত্তরাধিকারী আছে। তুমি দাও না-দাও তোমার সন্তানশ্রেণীর মধ্যে সে উন্নতি প্রবাহিত হইবে! তোমার আশেপাশে চারি দিকে সেই উন্নতির ঢেউ লাগিবে ; তুমি তো দুই দিনে পৃথিবী হইতে সবিয়া পড়িবে, কিন্তু তোমার জীবনের সমস্তটাই পৃথিবীর জন্য রাখিয়া যাইতে হইবে- তুমি মরিয়া গেলে বলিয়া তোমার জীবনের এক মূহুর্ত হইতে ধরণীকে বঞ্চিত করিতে পরিবে না, প্রকৃতির আইন এমনি কড়াক্কড। সচেতন ধর্ম অতএব এ জগতে স্বার্থপর হইবার জো নাই। পরার্থপরতাই এ জগতের ধর্ম। এই নিমিত্তই মানুষের সর্বোৎকৃষ্ট ধর্ম পরের জন্য আত্মোৎসর্গ করা। জগতের ধর্ম আমাদিগকে আগে হইতেই পরের জন্য উৎসৃষ্ট করিয়া রাখিয়াছে, সে বিষয়ে আমরা জগতের জড়াদপি জড়ের সমতুল্য। কিন্তু আমরা যখন স্বেচ্ছায় সচেতনে সেই মহাধর্মের অনুগমন করি তখনই আমাদের মহত্ত্ব, তখনি আমরা জড়ের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। কেবল তাঁহাই নয়, তখনি আমরা মহৎ সুখ লাভ করি। তখনই আমরা দেখিতে পাই যে, স্বার্থপরতায় সমস্ত জগৎকে এক পাৰ্থে ঠেলিয়া তাহার স্থানে অতি ক্ষুদ্র আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করিতে চাই ; কিন্তু পারিব কেন ? অহৰ্নিশি অশান্তি, অসুখ, হৃদয় ক্লান্ত হইয়া পড়ে, কিছুতেই তাহার আরাম থাকে না। যতই সে উপাৰ্জন করিতে থাকে, যতই সে সঞ্চয় করিতে থাকে, ততই তাহার ভার বুদ্ধি হইতে থাকে মাত্ৰ; কিন্তু যখনি আপনাকে ভুলিয়া পরের জন্য প্রাণপণ করি তখনি দেখি সুখের সীমা নাই। তখনি সহসা অনুভব করিতে থাকি সমস্ত জগৎ আমার স্বপক্ষে। আমি ছিলাম ক্ষুদ্র, হইলাম অত্যন্ত বৃহৎ। চন্দ্ৰ সূর্যের সহিত আমার বন্ধুত্ব হইল। G5VERNE (ECP bör যে যেথা আছে ভাই, চলেছে যেথা রবিশশী চল রে সেন্থা যাই!!