পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনুবাদ-চর্চা VS (o জাহাজের কয়েক গজ মাত্র দূরের সমস্ত দৃশ্য অস্পষ্ট করিয়া রাখিয়াছিল তাহা পরিষ্কার হইয়া গেল, ডাঙার উপরকার ঝাপসাভাবি (land haze) দেখা গেল, সূৰ্য সীসকবৰ্ণ আকাশ হইতে বাহির হইয়া আসিল । (8 একখণ্ড বরফ জাহাজের পাশ্বদেশ ঘর্ষণ করিল এবং এক মাইল দূরে সমুদ্রের মধ্যে দোলায়িত একটি সাদা জিনিসের প্রতি তোমার মনোযোগ আকৃষ্ট হইল। ইহাই প্ৰথম ভাসমান তুষারপর্বত। তুমি আরো নিকটে আসিলে তুষারগিরিসকল এত বহুসংখ্যক হইল যে, অসুখজনক হইয়া উঠিল; শীতল জলতল হইতে কৌতুহলী, সীলগুলি তাহদের মাথা উপরে তুলিতেছে। একটা সাদা তিমি বা ছোটো একঝাক নরহবিল তিমি গুরুম্বাস ফেলিয়া জাহাজের চারি দিকে বেড়াইতেছে। ( (. আমাকে অত্যন্তই বাথিত কবিয়াছে : S- অপেক্ষা চলি ছোটাে ছিল, সে অতি মনোহর স্বভাবের যুবক ছিল। সে আমার পিতার নিকট কাজ কবিতা, দুই বৎসর ধরিয়াই কাজ করিয়াছে। যতগুলিকে আমি জানি তাহদের মধ্যে সেই’ই অল্পবয়স্ক গ্রামা কৃষিমজুরের সর্বোৎকৃষ্ট নমুনা। তুমি তাহাকে দেখিলে ভালোবাসিতে ? সে তোমারই একটি কবিতার মতো ছিল ; বিপুল শারীরিক বল, প্ৰফুল্লতা ও সন্তোষ, সর্বজনীন মঙ্গলোচ্ছা এবং নিঃশব্দ পুরুষোচিত ব্যবহারে ঐ যুবকের তুলনা মেলা দুষ্কর ছিল। একটা বুদ্ধ চিকিৎসক তাহাকে হত্যা করিল। তাহার টাইফয়েড জ্বর হইয়াছিল, কিন্তু ঐ বৃদ্ধ নির্বোিধ দুইবার তাহার রক্ত মোক্ষণ করিল। ○ じ জবাবসান অতিক্ৰম কবিয়াও বাচিয়া ছিল, কিন্তু আপদ কাটাইয়া উঠিবার মতো শক্তি তাহার ছিল না। সকালবেলা S— যখন দাড়াইয়া ছিল চার্লি তখন দুই বাহুদ্বারা S- এর কণ্ঠলিঙ্গন করিয়া, তাহার মুখ টানিয়া নামাইয়া চুম্বন করিল। S— বলে সে তখনই জানিতে পারিল যে, শেষাবস্থা নিকটে। Sশেষ পর্যন্ত দিবারাত্রি তাহার সঙ্গে লাগিয়া ছিল। সে তোমার ধরনের মানুষ ছিল বলিয়া আমি এত করিয়া তোমাকে তাহার কথা লিখিলাম। তাহার সহিত তোমার যদি পরিচয় হইত, আমি সুখী হইতাম। তাহার মধ্যে শিশুর মাধুর্য এবং তরুণ বাইকিঙের সাহস শক্তি এবং সদাতৎপরভাব ছিল। তাহার পিতামাতা দরিদ্র। অধিক কাজের তাড়া পড়িলে তাহার মাতাও স্বামীর সহিত ক্ষেত্রে কাজ করেন। GA সেদিন অপরাহুে ভারী গরম ছিল; আর জাহাজ তখন কেপটাউনের প্রায় ১৫০ মাইল উত্তর-পশ্চিমে। ছায়াতেই উত্তাপ তখন ১০৫ ডিগ্ৰী, আকাশ তাম্রবর্ণ, সাগর ফুটন্ত তেলের মতো। হঠাৎ আমি ডেকের উপর হইতে একটা বিকট চীৎকার শুনিতে পাইলাম এবং দেখিলাম আতঙ্কগ্ৰস্ত কাফ্রিরা ছুটিয়া পালাইবার চেষ্টা করিতেছে। জাহাজের তটান্তিক ভাগের উপর দিয়া তাকাইয়া আমি এমন একটি জীবকে দেখিতে পাইলাম যাহার চেয়ে বিকটমূর্তি জলচর বা স্থলচর প্রাণী কল্পনা করার সম্ভাবনামাত্ৰ নাই। যদি আমি শান্তভাবে এমন কথা বলি যে, ঐ যে জীবটিকে দেখিয়াই প্ৰাচীনকালের বর্ণিত সমুদ্রের সপ বলিয়া বুঝিয়েছিলাম তাহার মাথাটা একটা বড়ো আয়তনের পিপার মতো, তবে মনে করিয়ো না। আমি অত্যক্তি করিতেছি।