পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 \OV রবীন্দ্র-রচনাবলী “দেবি, আপনি প্ৰসন্না হইয়াছেন; ইহা ছাড়া অন্য কোন বরে আমার প্রয়োজন থাকিতে পারে? তথাপি আমি ইহাই প্রার্থনা করিতেছি যে, জন্মান্তরেও যেন এই বণিকের সহিত আমার বন্ধুত্ব হয়।” “তথাস্তু।” এই বলিয়া দৈববাণী নীরব হইলে, সেই শবর আমাকে প্রভূত অর্থ দিয়া স্বভবনে পাঠাইয়া দিলেন। SS G. হিমবান নামে এক মহাপর্বত আছে— ইহা জগজনীর পিতা এবং কেবল গিরিরাজ নহে, শিবেরও গুরু বটে। বিদ্যাধরগণের আবাসভূত সেই মহাপর্বতে বিদ্যাধরাধিপতি রাজা জীমূতকেতু বাস করিতেন। তাহার গৃহে পূর্বপুরুষক্রমাগত সার্থকনামা কল্পবৃক্ষ ছিল। এক দিন রাজা জীমূতকেতু তাহার উদ্যানে সেই দেবতাত্মক কল্পদ্রুমের নিকট উপস্থিত হইয়া প্রার্থনা করিলেন, “ হে দেব, আমরা আপনার নিকট হইতে সর্বদা সমস্ত দ্রব্যই পাইয়া থাকি; আমি পুত্ৰহীন, অতএব, আমাকে একটি রিজয়ী পুত্ৰ প্ৰদান করুন।” কল্পদ্রুম বলিলেন, “রাজন, আপনার এক জাতিস্মর দানবীর ও সর্বভূতে দয়াবান পুত্ৰ উৎপন্ন হইবে!” ইহা শ্রবণে রাজা আনন্দিত হইয়া কল্পবৃক্ষকে প্ৰণামপর্বক গমন করিলেন এবং রানীকে এই সংবাদ জানাইয়া তাহার আনন্দ উৎপাদনা করিলেন। SRS ve তদনুসারে অচিরেই তাহার এক পুত্র উৎপন্ন হইল এবং পিতা সেই পুত্রের নাম রাখিলেন পাইতে লাগিলেন। কালক্রমে যৌবরাজ্য প্রাপ্ত হইলে তিনি একদিন জগতের প্রতি অনুকম্পাবশত নির্জনে পিতাকে নিবেদন করিলেন, “তাত, আমি জানি এই সংসারে সমস্ত পদার্থই ক্ষণভঙ্গুর; কিন্তু একমাত্ৰ মহাপুরুষগণের নির্মল যশই কল্পান্ত পর্যন্ত টিকিয়া থাকে। যদি পরোপকারজনিত যশ লাভ করিতে পারা যায়, তাহা হইলে উদার ব্যক্তিগণের নিকটে তাহার মতো আর কোন ধন প্ৰাণাপেক্ষাও অধিক মূল্যবান পরিগণিত হইতে পারে ?” Հ ֆ Գ “যে সম্পদে পরের উপকার করিতে পারা যায় না। তাহা তো বিদ্যুতের ন্যায় কেবল ক্ষণকালের জন্য লোকচক্ষুর কষ্টই উৎপাদনা করিয়া বিলীন হইয়া যায়। অতএব এই যে আমাদের অধিকারে অভিলষিত বস্তুপ্ৰদ কল্পবৃক্ষ রহিয়াছেন, ইহাকে যদি পরোপকারে লাগাইতে পারা যায় তাহা হইলে ইহার নিকটে সমস্ত ফল পাওয়া যাইবে । অতএব আমি সেইরূপ উপায় গ্রহণ করিতে চাহি যাহাতে ইহার ধন-দ্বারা প্রার্থী জনসমূহ দারিদ্র্য হইতে মুক্ত হয়।” জীমতবাহন পিতাকে এই আবেদন জানাইয়া ও তাহার অভীষ্ট ফল দান করিয়া থাকেন। অতএব আজ আপনি আমাদের একটি অভিলাষ পূর্ণ করুন। হে বন্ধু, আপনি এই সমগ্ৰ পৃথিবীর দৈনা উপশম করুন! আপনার জন্ম হউক, আপনি ধনাখী জগতেরই জনা প্রদত্ত হইয়াছেন।” সেই ত্যাগশীলকর্তৃক এইরূপে উক্ত হইয়া কল্পদ্রুম ভূতলে প্রচুর স্বর্ণবর্ষণ করিলেন এবং লোকেরা তাহাতে আনন্দিত হইয়া উঠিল। SS by পূর্বকল্পে কাল নামে এক ব্ৰাহ্মণ ছিলেন। তিনি পুষ্করতীর্থে গমন করিয়া সেখানে দিবারাত্রি মন্ত্র জপ করিতেছিলেন। তাহার জপ করিতে করিতে দেবগণের দুই অযুত বৎসর চলিয়া গেল। তখন তাহার মস্তক হইতে অবিচ্ছিন্ন এক মহৎ জ্যোতি আবির্ভূত হইল এবং ইহা দশ সহস্ৰ সূর্যের ন্যায় অন্তরীক্ষে উৎসারিত হইয়া সিদ্ধ প্ৰভুতির গতিকে রুদ্ধ ও ত্ৰিভুবনকে প্ৰজ্বলিত করিল। তখন ব্ৰহ্মা, ইন্দ্র ও