পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমালোচনা V মহৎ চরিত্রের একটি মহৎ কার্য মহৎ অনুষ্ঠান দেখিতে চাই। হীন ক্ষুদ্র তস্করের ন্যায় নিরস্ত্ৰ ইন্দ্ৰজিৎকে বধ করা, অথবা পুত্ৰশোকে অধীর হইয়া লক্ষ্মণের প্রতি শক্তিশেল নিক্ষেপ করাই কি একটি মহাকাব্যের বর্ণনীয় হইতে পারে? এইটুকু যৎসামান্য ক্ষুদ্র ঘটনাই কি একজন কবির কল্পনাকে এত দূর উদ্দীপ্ত করিয়া দিতে পারে যাহাতে তিনি উচ্ছসিত হৃদয়ে একটি মহাকাব্য লিখিতে স্বতঃপ্রবৃত্ত হইতে পারেন? রামায়ণ মহাভারতের সহিত তুলনা করাই অন্যায়, বুত্রসংহারের সহিত তুলনা করিলেই আমাদের কথার প্রমাণ হইবে। স্বগ-উদ্ধারের জন্য নিজের অস্থিদান এবং অধর্মের ফলে বৃত্রের সর্বনাশ- যথার্থ মহাকাব্যের উপযোগী বিষয়। আর, একটা যুদ্ধ, একটা জয় পরাজয় মাত্র, কখনো মহাকাব্যের উপযোগী বিষয় হইতে পারে না। গ্ৰীসীয়দিগের সহিত যুদ্ধে ট্রয়নগরীর ধ্বংস-ঘটনায় গ্ৰীসীয়দিগের জাতীয় গৌরব কীর্তিত হয়— গ্ৰীসীয় কবি হােমারকে সেই জাতীয় গৌরবকল্পনায় উদ্দীপিত করিয়াছিল, কিন্তু মেঘনাদবধে বর্ণিত ঘটনায় কোনখানে সেই উদ্দীপনী মূলশক্তি লক্ষিত হয় আমরা জানিতে চাই। দেখিতেছি মেঘনাদবধ কাব্যে ঘটনার মহত্ত্ব নাই, একটা মহৎ অনুষ্ঠানের বর্ণনা নাই! তেমন মহৎ চরিত্রও নাই। কার্য দেখিয়াই আমরা চরিত্র কল্পনা করিয়া লই । যেখানে মহৎ অনুষ্ঠানের বর্ণনা নাই। সেখানে কী আশ্রয় করিয়া মহৎ চরিত্র দাড়াইতে পরিবে ! মেঘনাদবধ কাবোর পাত্ৰগণের চরিত্রে অনন্য-সাধারণত নাই, অমরতা নাই। মেঘনাদবধের DBD HuuB BeS S BBD HuOBBBe BuBS DuBB0 HBBBB BBBSSSSLLLLLuSDD BDBBDBDJ BuBBBB BBBS মেঘনাদবধ কাব্যের কোনো পাত্র আমাদের সুখদুঃখের সহচর হইতে পারেন না, আমাদের কার্যের প্রবর্তক নিবর্তক হইতে পারেন না ; কখনো কোনো অবস্থায় মেঘনাদবধ কাব্যের পাত্ৰগণ আমাদের স্মরণপথে পড়িবে না : পদাকাবো। যাইবার প্রয়োজন নাই— চন্দ্ৰশেখর উপন্যাস দেখো। প্ৰতাপের চরিত্রে আমরত আছে — যখন মেঘনাদবধের রাবণ রাম লক্ষ্মণ প্রভূতির বিস্মৃতির চিরস্তব্ধ সমাধিভবনে শায়িত তখনো প্ৰতাপ চন্দ্ৰশেখর হািদয়ে বিরাজ কবিৰে । একবার ভাবিয়া দেখো দেখি, যেমন আমরা এই দৃশ্যমান জগতে বাস করিতেছি তেমনি আর-একটি অদৃশ্য জগৎ অলক্ষিত ভাবে আমাদের চারি দিকে রহিয়াছে। বহুদিন ধরিয়া বহুতর কবি মিলিয়া আমাদেৱ সেই জগৎ রচনা করিয়া আসিতেছেন ; আমি যদি ভারতবর্ষে জন্মগ্রহণ না করিয়া আফ্রিকায় জন্মগ্রহণ কবিতাম তাহা হইলে আমি যেমন একটি স্বতন্ত্র প্রকৃতির লোক হইতাম, তেমনি আমি যদি বাল্মীকি ব্যাস প্রভৃতির কবিতুজগতে না জন্মিয়া ভিন্নদেশীয় কবিতুজগতে জন্মিাতাম তাহা হইলেও সকল সময়ে তাহা জানিতে ও পারি না- অবিরত তাহদের কথোপকথন শুনিয়া আমাদের মতামত কত নির্দিষ্ট হইতেছে, আমাদের কার্য কত নিয়ন্ত্রিত হইতেছে, তাহা আমরা বুঝিতেই পারি না, জানিতেই পাই না। সেই-সকল অমর সহচর-সৃষ্টিই মহাকবিদের কাজ! এখন জিজ্ঞাসা করি, আমাদের চতুর্দিকব্যাপী সেই কবিতুজগতে মাইকেল কয়জন নূতন অধিবাসীকে প্রেরণ করিয়াছেন? না যদি করিয়া থাকেন, তবে তাহার কোন লেখাটাকে মহাকাব্য বল ? আর-একটা কথা বক্তবা আছে— মহৎ চরিত্র যদি-বা নূতন সৃষ্টি করিতে না পারিলেন, তবে কবি কোন মহৎকল্পনার বশবর্তী হইয়া অন্যের সৃষ্ট মহৎ চরিত্র বিনাশ করিতে প্ৰবৃত্ত হইলেন ? কবি বলেন: | despise Ram and his rabble Gist Cyl RICrs (5 NC3- 12 &C, a NIS 23 C, তিনি মহাকাব্য-রচনার যোগ্য কবি নহেন। মহত্ত্ব দেখিয়া তাহার কল্পনা উত্তেজিত হয় না। নহিলে তিনি কোন প্ৰাণে রামকে স্ত্রীলোকের অপেক্ষা ভীরু ও লক্ষ্মণকে চোরের অপেক্ষা হীন করিতে পারিলেন! দেবতা দিগকে কাপুরুষের অধম ও রাক্ষসদিগকেই দেবতা হইতে উচ্চ করিলেন!! এমনতর প্রকৃতিবহির্ভূত আচরণ অবলম্বন করিয়া কোনো কাবা কি অধিক দিন বাচিতে পারে? ধূমকেতু কি ধ্ৰুবজ্যোতি সূর্যের ন্যায় চিরদিন পৃথিবীতে কিরণ দান করিতে পারে? সে দুই দিনের জন্য তাহার বাষ্পময় লঘু পুচ্ছ লইয়া, পৃথিবীর পৃষ্ঠে উল্কা বর্ষণ করিয়া, বিশ্বজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়া আবার কোন অন্ধকারের রাজো গিয়া প্ৰবেশ করে।