পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

' , ર૭ রবীন্দ্র-রচনাবলী

"আমিই করব। আমি যে কিছুই মানি নে। আমার সেই নামায়ার ফকার . মধ্যে তেত্ৰিশ কোটি দেবতা আর অপদেবতার জায়গার টানাটানি হবে না। বিশ্বস্বষ্টির সমস্ত ছেলেখেলা ধরাবার জন্যে আকাশ শূন্ত হয়ে আছে।” । বিভা বুঝল বিভারই ভগবানের বিরুদ্ধে ওর এই বিদ্রুপ। কোনো তর্ক না করে । সে মাথ। নিচু করে চুপ করে বসে রইল। й і . . . অভীক দরজার কাছ থেকে ফিরে এসে বললে, “দেখো বী, তুমি, প্রচণ্ড ন্যাশনালিস্ট। ভারতবর্ষে ঐক্যস্থাপনের স্বপ্ন দেখ। কিন্তু যে দেশে দিনরাত্রি ধর্ম নিয়ে খুনোখুনি সে দেশে সব ধর্মকে মেলাবার পুণ্যব্রত আমার মতো নাস্তিকেরই। আমিই ভারতবর্ষের ত্রাণকর্তা।” অভৗকের নাস্তিকতা কেন যে এত হিংস্র হয়ে উঠেছে বিভা তা জানে। তাই তার উপরে রাগ করতে পারে না। কিছুতে ভেবে পায় না কী হবে এর পরিণাম । , বিভীর আর যা কিছু আছে সবই সে দিতে পারে, কেবল ঠেকেছে ওর পিতার ইচ্ছায়। সে ইচ্ছা তো মত নয়, বিশ্বাস নয়, তর্কের বিষয় নয়। সে ওর স্বভাবের । অঙ্গ। তার প্রতিবাদ চলে না। বার বার মনে করেছে এই বাধা সে লঙ্ঘন করবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কিছুতে তার প। সরতে চায় না। سمية . বেহার এসে খবর দিলে, অমরবাবু এসেছেন। অভীক অবিলম্বে দুড় দাড় করে সিড়ি বেয়ে চলে গেল। বিভার বুকের মধ্যে মোচড়াতে লাগল। প্রথমটাতে ভাবলে, অধ্যাপককে বলে পাঠাই আজ পাঠ নেওয়া হবে না। পরক্ষণেই মনটাকে শক্ত করে বললে, “আচ্ছা, এইখানে নিয়ে আয়। বসতে বল। একটু বাদেই আসছি।” i শোবার ঘরে উপুড় হয়ে বিছানায় গিয়ে পড়ল। বালিশ আঁকড়ে ধরে কান্না। অনেকক্ষণ পরে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে মুখে চোখে জল দিয়ে হাসিমুখে ঘরে এসে বললে, “আজ মনে করেছিলুম ফাকি দেব।” "শরীর ভালো নেই বুঝি ?” 警 “ন, বেশ আছে। আসল কথা, কতকাল ধরে রবিবারের ছুটি রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে, থেকে থেকে তার প্রকোপ প্রবল হয়ে ওঠে।” * , অধ্যাপক বললেন, “আমার রক্তে এ পর্যন্ত ছুটির মাইক্রোব ঢোকবার সময় পায় নি। কিন্তু আমিও আজ ছুটি নেব। কারণটা বুঝিয়ে বলি। এ বছর কোপেনহেগেনে সার্বজাতিক ম্যাথামেটিক্স কনফারেন্স হবে। আমার নাম কী করে ওদের নজরে পড়ল জানি নে। ভারতবর্ষের মধ্যে আমিই নিমন্ত্রণ পেয়েছি। এতবড়ো সুযোগ তো ব্যর্থ হতে দিতে পারি নে।”