পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তিন সঙ্গী ২৫৩ যে, একদিন হেসে উঠেছি আপন উন্মায়। এদিকে বিজ্ঞানীর যুক্তি কাজ করছে ভিতরে ভিতরে। মনকে জানাই, এটাও একটা মস্ত কথা, আমার যাতায়াতের পথের ধারে ও বসে থাকে— একান্ত নিভৃতই যদি ওর প্রার্থনীয় হত, তা হলে ঠাই বদল করত। প্রথম প্রথম আমি ওকে আড়ে আড়ে দেখেছি, যেন দেখে নি এই ভান করে। ইদানীং মাঝে মাঝে স্পষ্ট চোখোচোথি হয়েছে— যতদূর আমার বিশ্বাস, সেটাকে চার চোখের অপঘাত ব’লে ওর মনে হয় নি। 神 ,' এর চেয়েও বিশেষ একটা পরীক্ষা হয়ে গেছে। এর আগে দিনের বেলায় মাটিপাথরের কাজ সাঙ্গ ক’রে দিনের শেষে ঐ পঞ্চবটীর পথ দিয়ে একবারমাত্র যেতেম বাসার দিকে। সম্প্রতি যাতায়াতের পুনরাবৃত্তি হতে আরম্ভ হয়েছে। এই ঘটনাট যে জিয়লজি সম্পর্কিত নয়, সে কথা বোঝবার মতো বয়স হয়েছে অচিরার, আমারও সাহস ক্রমশ বেড়ে চলল যখন দেখলুম, এই স্বম্পষ্ট ভাবের আভাসেও তরুণীকে স্থানচ্যুত করতে পারল না। এক-একদিন হঠাৎ পিছন ফিরে দেখেছি, অচিরা আমার তিরোগমনের দিকে চেয়ে আছে, আমি ফিরতেই তাড়াতাড়ি ডায়ারির দিকে চোখ নামিয়ে নিয়েছে। সন্দেহ হল, ওর ডায়ারি লেখার ধারায় আগেকার মতো বেগ নেই। আমার বিজ্ঞানী বুদ্ধিতে মনোরহস্তের আলোচনা জেগে উঠল। বুঝেছি সে কোনো-এক পুরুষের জন্যে তপস্যার ব্রত নিয়েছে, তার নাম ভবতোষ, সে ছাপরায় অ্যাসিস্টেন্ট ম্যাজেস্টেটি করছে বিলেত থেকে ফিরে এসেই। তার পূর্বে দেশে থাকতে এদের দুজনের প্রণয় ছিল গভীর, কাজ নেবার মুখেই একটা আকস্মিক বিপ্লব ঘটেছে। ব্যাপারটা কী, খবর নিতে হবে। শক্ত হল না, কেননা পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কেন্থি জের সতীর্থ আছে বঙ্কিম । ডাকে চিঠি লিখে পাঠালুম, বেহার সিভিল সার্ভিসে আছে ভবতোষ । কন্যাকর্তাদের মহলে জনশ্রুতি শোনা যায়, লোকটি সংপাত্র। আমার কোনো বন্ধু আমাকে তার মেয়ের জন্যে ঐ লোকটিকে প্রাজাপতিক ফণদে ফেলতে সাহায্য করতে অনুরোধ করেছেন। রাস্ত পরিষ্কার আছে কি না, আদ্যন্ত খবর নিয়ে তুমি যদি আমাকে জানাও, কৃতজ্ঞ হব। লোকটির মতিগতি কী রকম তাও জানতে চাই। উত্তর এল, রাস্ত বন্ধ। আর মতিগতি সম্বন্ধে এখনও যদি কৌতুহল বাকি থাকে, তবে শোনো – i. ‘কলেজে পড়বার সময় আমি ছাত্র ছিলুম ডাক্তার অনিলকুমার সরকারের— অ্যালফাবেটের অনেকগুলি অক্ষর জোড়া তার নাম। যেমন তার অসাধারণ পাণ্ডিত্য, তেমনি ছেলেমানুষের মতো তার সরলতা। একমাত্র সংসারের আলো তার নাতনিটিকে