পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२¢७ রবীন্দ্র-রচনাবলী “ভয় করেছিল।” “ভয় ? আমাকে ভয় ?” “আপনি যে বড়ো লোক। দাদুর কাছে শুনেছি। তিনি যে আপনার লেখ৷ প্রবন্ধ বিলিতি কাগজে পড়েছিলেন । তিনি যা পড়েন আমাকে বোঝাতে চেষ্টা করেন ।” مید

  • এটাও করেছিলেন ?”

“ই, করেছিলেন। কিন্তু লাটিন নামের পাহারার ঘটা দেখে জোড়হাত ক’রে বলেছিলুম, দাদু, এটা থাক, বরঞ্চ তোমার কোয়ণ্টম থিয়োরির বইখানা নিয়ে আসি * "সেটা বুঝি আপনি বুঝতে পারেন ?” “কিছুমাত্র না। কিন্তু দাদুর একটা বদ্ধ সংস্কার আছে– সবাই সবকিছুই বুঝতে পারে । তার সে বিশ্বাস ভাঙতে আমার ভালো লাগে না । তার আর-একটা আশ্চর্য ধারণা আছে— মেয়েদের সহজবুদ্ধি পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি তীক্ষ। তাই ভয়ে ভয়ে আছি এইবার নিশ্চয়ই টাইম-স্পেস’-এর জোড়-মেলানো সম্বন্ধের ব্যাখ্য আমাকে শুনতে হবে। আসল কথা, মেয়েদের উপর তার করুণার অন্ত নেই। দিদিম যখন বেঁচে ছিলেন, বড়ে বড়ো কথা পাড়লেই তিনি মুখ বন্ধ করে দিতেন। তাই মেয়েদের তীক্ষ্ণ বুদ্ধি যে কতদূর যেতে পারে, তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ দিদিমার কাছ থেকে পান নি। আমি ওঁকে হতাশ করতে পারব না। অনেক শুনেছি, বুঝি নি, আরও * অনেক শুনব আর বুঝব না।” d অচিরার দুই চোখ কৌতুকে স্নেহে জলজল ছলছল করে উঠল। ইচ্ছে করছিল, স্নিগ্ধ কণ্ঠের এই আলাপ শীঘ্ৰ যেন শেষ হয়ে না যায়। দিনের আলো মান হয়ে এল। সন্ধ্যার প্রথম তার জলে উঠেছে শালবনের মাথার উপরে। সাওতাল মেয়ের জালানি-কাঠ সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে ঘরে, দূর থেকে শোনা যাচ্ছে তাদের গান। এমন সময় বাইরে থেকে ডাক এল, “দিদি, কোথায় তুমি। অন্ধকার হয়ে এল যে। আজকাল সময় ভালো নয় ।” “ভালো তো নয়ই মাছ, তাই একজন রক্ষাকর্তা নিযুক্ত করেছি।” অধ্যাপক আসতেই তার পায়ের ধুলো নিয়ে প্রণাম করলুম। তিনি শশব্যস্ত হয়ে উঠলেন। পরিচয় দিলুম, “আমার নাম নবীনমাধব সেনগুপ্ত।” • বৃদ্ধের মুখ উজ্জল হয়ে উঠল, বললেন, “বলেন কী, আপনিই ডাক্তার সেনগুপ্ত ? আপনি তো ছেলেমাতুষ ।” o আমি বললুম, “নিতান্ত ছেলেমানুষ। আমার বয়স ছত্রিশের বেশি নয়।” .*.