পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* তিন সঙ্গী ২৬১ জুটল, ম আবার বললেন, ‘বাবা, এবার বিয়ে করতে হবে, আমার আর কদিন বা সময় আছে।” আপনি বললেন, “আমার জীবন আর আমার সায়ান্স এক, সে আমি দেশকে উৎসর্গ করব। আমি কোনোদিন বিয়ে করব না । হতাশ হয়ে আবার তিনি চোখের জল মুছে বসে আছেন। আপনার ছত্রিশ বছর বয়সের গণিতফল গণনা করতে আমার গণনায় ভুল হয়েছে কি না বলুন, সত্যি করে বলুন ।” এ মেয়ের সঙ্গে অনবধানে কথা কওয়৷ বিপদজনক । কিছুদিন আগেই একট। ব্যাপার ঘটেছিল। প্রসঙ্গক্রমে অচির। অামাকে বলেছিল, “আমাদের দেশে মেয়েদের আপনার পান সংসারের সঙ্গিনীরূপে । সংসারে ষাদের দরকার নেই, এদেশের মেয়েরাওঁ তাদের কাছে অনাবশ্যক। কিন্তু বিলেতে যার বিজ্ঞানের তপস্বী, তাদের তে। উপযুক্ত তপস্বিনী জোটে, যেমন ছিল অধ্যাপক কুরির সধর্মিণী মাদাম কুরি। সে-রকম কোনো মেয়ে আপনি সে দেশে থাকতে পান নি ?” মনে পড়ে গেল ক্যাথরিনের কথ। । একসঙ্গে কাজ করেছি লণ্ডনে থাকতে । এমনকি, আমার একট। রিসর্চের বইয়ে আমার নামের সঙ্গে তার নামও জড়িত ছিল। মানতে হল কথাটা । অচির বললে, “র্তাকে আপনি বিয়ে করলেন না কেন । তিনি কি রাজি ছিলেন না।” আবার মানতে হল, “হা, প্রস্তাব র্তার দিক থেকেই উঠেছিল।” “তবে ?” “আমার কাজ যে ভারতবর্ষের। শুধু সে তো বিজ্ঞানের নয়।” “অর্থাৎ ভালোবাসার সফলতা আপনার মতে সাধকের কামনার জিনিস নয়। মেয়েদের জীবনের চরম লক্ষ্য ব্যক্তিগত, আপনাদের নৈর্ব্যক্তিক ।” এর জবাবটা হঠাৎ মুখে এল না। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে অচিরা বললে, “বাংলা সাহিত্য আপনি বোধ হয় পড়েন না। কচ ও দেবযানী ব’লে একট। কবিতা আছে। তাতে ঐ কথাই আছে, মেয়েদের ব্রত হচ্ছে পুরুষকে বাধা, আর পুরুষদের ব্রত সে-বাধন কাটিয়ে অমরলোকের রাস্ত বানানো। কচ বেরিয়ে পড়েছিল দেবযানীর অনুরোধ এড়িয়ে, আপনি কাটিয়ে এসেছেন মায়ের অনুনয়। একই কথ। মেয়েপুরুষের এই চিরকালের স্বন্দ্রে আপনি জয়ী হয়েছেন। জয় হোক আপনার পৌরুষের। কাদুক মেয়ের, সে-কান্না আপনার নিন পূজার নৈবেদ্য। দেবতার উদ্দেশে অণসে নৈবেদ্য, কিন্তু দেবতা থাকেন নিরাসক্ত ।” অধ্যাপক এই আলোচনার মূল লক্ষ্য কিছুই বুঝলেন না। সগর্বে বললেন, “দিদির মুখে গভীর সত্য কেমন বিনা চেষ্টায় প্রকাশ পায়, বাইরের লোকে শুনলে মনে করবে-—”