পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তিন সঙ্গী ২৭৫ “জেনে রাখলুম, বাচলুম। অনেক অধ্যাপক দেখেছি, তাদের মুখ থেকে হাসি বের করতে ডাক্তার ডাকতে হয় ।” * “বাহব, আমারই দলের লোক দেখছি তুমি । তা হলে এবার আসল কথাটা পাড়া হোক ৷” 嚇 “জানেন বোধ হয়, জীবনে আমার স্বামীর ল্যাবরেটরিই ছিল একমাত্র আনন্দ । আমার ছেলে নেই, ঐ ল্যাবরেটরিতে বসিয়ে দেবে বলে ছেলে খুঁজছি। কানে এসেছে রেবতী ভট্টাচার্যের কথা।” অধ্যাপক বললেন,"যোগ্য ছেলেই বটে। তার যে লাইনের বিষ্ঠে সেটাকে শেষ পর্যন্ত চালান করতে মালমসলা কম লাগবে না।” সোহিনী বললে, “আমার রাশকরা টাকায় ছাত পড়ে যাচ্ছে। আমার বয়সের বিধবা মেয়ের ঠাকুরদেবতার দালালদের দালালি দিয়ে পরকালের দরজ ফাক করে নিতে চায়। আপনি শুনে হয়তে রাগ করবেন, আমি ও সব কিছুই বিশ্বাস করি নে।” চৌধুরী দুই চক্ষু বিস্ফারিত করে বললেন, “তুমি তবে কী মান।” o “মানুষের মতে মানুষ যদি পাই, তবে তার সব পাওনা শোধ করে দিতে চাই যতদূর আমার সাধ্য আছে। এই আমার ধর্মকর্ম।” 通 চৌধুরী বললেন, “হুররে। শিলা ভাসে জলে। মেয়েদের মধ্যেও দৈবাৎ কোথাও কোথাও বুদ্ধির প্রমাণ মেলে দেখছি । আমার একটি বি.এসসি. বোকা আছে, সেদিন হঠাৎ দেখি, গুরুর পা ছুয়ে সে উলটো ডিগবাজি খেলতে লেগেছে, মগজ থেকে বুদ্ধি যাচ্ছে উড়ে ফাট শিমূলের তুলোর মতো। তা তোমার বাড়িতেই ওকে ল্যাবরেটরিতে বসিয়ে দিতে চাও? তফাতে আর কোথাও হলে হয় না ?” * “চৌধুরীমশায়, আপনি ভুল করবেন না, আমি মেয়েমানুষ। এইখানেই এই ল্যাবরেটরিতেই হয়েছে আমার স্বামীর সাধনা। তার ঐ বেদির তলায় কোনো-একজন যোগ্য লোককে বাতি জালিয়ে রাখবার জন্যে যদি বসিয়ে দিতে পারি, তা হলে যেখানে থাকুন তার মন খুশি হবে।” । চৌধুরী বললেন, “বাই জোভ, এতক্ষণে মেয়েমানুষের গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। শুনতে খারাপ লাগল না। একটা কথা জেনে রেখো, রেবতীকে যদি শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি সাহায্য করতে চাও তা হলে লাখটাকারও লাইন পেরিয়ে যাবে।” “গেলেও আমার খুদকুঁড়ে কিছু বাকি থাকবে।” 姆= “কিন্তু পরলোকে র্যাকে খুশি করতে চাও তার মেজাজ খারাপ হয়ে যাবে না তো ? শুনেছি তারা ইচ্ছা করলে ঘাড়ে চড়ে লাফালাফি করতে পারেন।”