পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছোটো গল্প শেষকথা । সাহিঙ্গ্য বড়ো গল্প বলে যেসব প্ৰগলভ বাণীবাহন দেখা যায় তারা প্রাস্তৃতাত্ত্বিক যুগের প্রাণীদের মতো–তাদের গ্রাণের পরিমাণ যত দেহের পরিমাণ তার চার গুণ, তাদের লেজটা কলেবরের অদ্ভুক্তি r , , । i 1. অতিপরিমাণ ঘাসপাতা খেয়ে ধরে পেট-মোটা তারা ভারবাহী জীব, হুপাকার মালের বস্ত টানা তাদের অদৃষ্টে। বড়ে গল্প সেই জাতের, মাল-বোঝাইওয়ালা । যেসব প্রাণীর খোরাক স্বল্প এবং সারালো, জাওর কেটে কেটে তারা প্রলম্বিত করে না ভোজন-ব্যাপার অধ্যায়ের পর অধ্যায়ে। ছোটাে গল্প সেই জাতের ; বোঝা বইবার জন্যে সে নয়, একেবারে সে মার লাগায় মর্মে লঘু লম্ফে। 單 \. কিন্তু গল্পের ফরমাশ আসছে বড়োবহরের। অনেকখানি মালকে মাহৰ অনেকখানি দাম দিয়েঠকতেও রাজি হয়। ওটা তার আদিম দুৰ্নিবার প্রবৃত্তির দুর্বলতা। এটাই দেখতে পাওয়া যায় আমাদের দেশের বিয়ের ব্যাপারে। , ইতরের মনভোলানো অতিপ্রাচুর্য এমনতরো রসাত্মক ক্রিয়াকর্মেও তত্রসমাজের বিনা প্রতিবাদে আজও চলে আসছে। আতিশয্যের ঢাকবাজানো পৌত্তলিকতা মানুষের প্রপৈত্রিক সংস্কার। মানুষের জীবনট বিপুল একটা বনস্পতির মতো। তার আয়তন তার আকৃতি মুঠাম নয়। দিনে দিনে চলছে তার মধ্যে এলোমেলো ডালপালার পুনরাবৃত্তি। এই স্ত,পাকার একঘেয়েমির মধ্যে হঠাৎ একটি ফল ফলে ওঠে, সে নিটােল, সে স্বড়োল, বাইরে তার রঙ রাঙা কিংবা কালো, ভিতরে তার রস তীব্র কিংবা মধুর। সে সংক্ষিপ্ত, সে অনিবার্য, সে দৈবলব্ধ, সে ছোটো গল্প। , - একটা দৃষ্টান্ত দেখানে যাক। রাজা এডওআর্ড ভ্রমণে বেরলেন দেশ-দেশান্তরে। মুখ ক্লাবকদের ভিড় চলল সঙ্গে সঙ্গে, খবরের কাগজের প্যারাগ্রাফের ঠোঙাগুলো ঠেসে ভরে ভরে উঠল। এমন সময় যতসব রাজদূত, রাষ্ট্রনায়ক, বণিকসম্রাট, লেখনীবজ্ৰপাণি সংবাদপত্রিকের ঘেঁষাৰ্ঘেষি ভিড়ের মধ্যে একটা কোন ছোটাে বন্ধ দিয়ে রাজার চোখে পড়ল এক অকুলীন আমেরিকানী। শম্বভৌ সমারোহের স্বরবর্ধণ মুহূর্তে হয়ে গেল অবাস্তব, কালো পর্ম পড়ে গেল ইতিহাসের অসংখ্য দীপীপ্ত রঙ্গমঞ্চের উপর। সমস্ত কিছু বাদ দিয়ে জল জল করে উঠল ছোটাে গল্পটি দুর্লভ মূল্য। গোলমালের ভিতরে অদৃপ্ত আর্টিস্ট ছিলেন আড়ালে, তাকিয়েছিলেন ব্যক্তিগত জীবনসরোবরের গভীর অগোচরে। দেখছিলেন অতলসঞ্চারী অজানা মাছ কখন পড়ে তার