পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छिन जत्रो ৩২১। একটিমাত্র অবকাশে তাকে দেখা যায়, হঠাৎ চোখ এড়িয়ে যাবারই কথা। সেদিন মেঘের মধ্যে দিয়ে একটি আশ্চর্ষ দীপ্তি বিচ্ছুরিত হয়েছিল। সেই গাছগুলোর ফাকটার ভিতর দিয়ে রাঙা আলোর ছোরা চিরে ফেলেছিল ভিতরকার ছায়াটাকে। ঠিক সেই আলোর পথে বসে আছে মেয়েটি গাছের গুড়িতে হেলান দিয়ে, পা দুটি বুকের কাছে গুটিয়ে নিয়ে। পাশে ঘাসের উপর পড়ে আছে একখানা খাতা, বোধ হয় ডায়ারি । । বুকের মধ্যে ধৰ্ক করে উঠল, থমকিয়ে গেলুম। দেখলুম ষেন বিকেলের মান রৌদ্রে গড়া একটি সোনার প্রতিমা । চেয়ে রইলুম গাছের গুড়ির আড়ালে দাড়িয়ে । অপূর্ব ছবি এক মুহূর্তে চিহ্নিত হয়ে গেল মনের চিরস্মরণীয়াগারে। আমার বিস্তৃত অভিজ্ঞতার পথে অনেক অপ্রত্যাশিত মনোহরের দরজায় ঠেকেছে মন, পাশ কাটিয়ে চলে গেছি, আজ মনে হল জীবনের একটা কোন চরমের সংস্পর্শে এসে পৌছলুম। এমন করে ভাব, এমন করে বলা আমার একেবারে অভ্যন্ত নয়। যে আঘাতে মানুষের নিজের অজানা একটা অপূর্ব স্বরূপ ছিটকিনি খুলে অবারিত হয়, সেই আঘাত আমাকে লাগল কী করে । d অত্যন্ত ইচ্ছা করছিল ওর কাছে গিয়ে কথার মতে কথা একটা-কিছু বলি। কিন্তু জানি নে কী কথা যে পরিচয়ের সবপ্রথম কথা, যে কথায় জানিয়ে দেবে খৃষ্টীয় পুরাণের প্রথম স্বষ্টির বাণী— আলো হোক, ব্যক্ত হোক যা অব্যক্ত । ", আমি মনে মনে ওর নাম দিলুম— অচিরা । তার মানে কী। তার মানে এক মুহূর্তেই যার প্রকাশ, বিদ্যুতের মতো । . একসময়ে মনে হল অচিরা যেন জানতে পেরেছে কে একজন দাড়িয়ে আছে আড়ালে। স্তব্ধ উপস্থিতির একটা নিঃশব্দ শব্দ আছে বুঝি । একটু তফাতে গিয়ে কোমরবন্ধ থেকে ভুজালি নিয়ে একান্ত মনোযোগের ভান করে মাটি খোচাতে লাগলুম। ঝুলিতে যা হয় কিছু দিলুম পুরে, গোট কয়েক কঁাকরের ঢেলা ৷ চলে গেলুম মাটির দিকে ঝুকে পড়ে কী যেন সন্ধান করতে করতে। কিন্তু নিশ্চয় মনে জানি র্যাকে ভোলাতে চেয়েছিলুম তিনি ভোলেন নি। মুগ্ধ পুরুষচিত্তের বিহ্বলতার আরও অনেক দৃষ্টান্ত আরও অনেকবার তার গোচর হয়েছে সন্দেহ নেই। আশা করলুম আমার বেলায় এটা তিনি উপভোগ করলেন, সকৌতুকে কিংবা সগর্বে, কিংবা হয়তো বা একটু মুগ্ধ মনে। কাছে যাবার বেড়া যদি আর-একটু ফাক করতুম তা হলে কী জানি কী হত। রাগ করতেন, না রাগের ভান করতেন ? অত্যন্ত চঞ্চল মনে চলেছি আমার বাংলাঘরের দিকে এমন সময় চোখে পড়ল দুই